ক্ষমতাশালীদের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার জের ধরে সাংবাদিকদের ওপর অবারিতভাবে চলমান হামলা, মামলা, নির্যাতন ও হত্যা বাংলাদেশে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এমন ঘটনা ঘটিয়ে, ক্ষমতার আনুকূল্যে বিচারের আ্ওতার বাইরে থাকার বিষয়টিও স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, সাংবাদিক গোলাম রব্বানী হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সাংবাদিক গোলাম রব্বানীর পরিবারের সূত্রে জানা গেছে যে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের একজন জনপ্রতিনিধি তাকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন এবং তার লোকজনই তাকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পর, বাড়ি ফেরার পথে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, “শুধু তাই নয়, গত ১১ এপ্রিল গোলাম রব্বানীকে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাও মারধর করেছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদে জানা যায়।”
পেশাগত দায়িত্ব পালনের জের ধরে, গোলাম রব্বানী হত্যাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, “ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, অনিয়ম, অন্যায় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলেই সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবান ও তাদের যোগসাজসকারী কর্তৃক সাংবাদিকের ওপর হামলা-নির্যাতন, আটক, গুম ও এমনকি হত্যা এখন নিয়মিত হয়ে উঠেছে।”
তিনি বলেন, “সাম্প্রতিককালে সাংবাদিকদের ওপর সংঘঠিত বিভিন্ন হামলা, মামলা ও নির্যাতনের প্রতিরোধে প্রশাসনিক ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সাফল্যের ঘাটতি, নির্লিপ্ততা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের একাংশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন পাওয়ায়, হামলাকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে; যার সর্বশেষ নিদর্শন জামালপুরে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী হত্যাকাণ্ড।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে, জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্নভাবে ক্ষমতাধররা নিজেদের দুর্নীতি-অন্যায় লুকিয়ে রাখতে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “পাশাপাশি সাংবাদিক নির্যাতনের জন্য যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী, তারা কোনোভাবে ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলেই বিচারের বাইরে থেকে যাবেন; এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। মুক্ত সাংবাদিকতার এই সংকট নিরসনে সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, তবে তার দৃষ্টান্ত হিসেবে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক সরাসরি জড়িতদের পাশাপাশি, যাদের নির্দেশে, যোগসাজসে ও যাদের স্বার্থ সুরক্ষায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানীকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।”
তিনি বলেন, “সাংবাদিক নির্যাতন করলে, এমনকি হত্যা করলে কোনো শাস্তি হয় না; এমন ধারণা এক প্রকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে, সর্বশেষ জামালপুরে গোলাম রব্বানী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে এমন ধারণাও প্রতিষ্ঠিত হওয়া অমূলক নয় যে, গণমাধ্যমের কণ্ঠস্বর রোধে যে কোনো কিছুই করা যায়। যার মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো রয়েছেই। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের দায় সরকারের।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গোলাম রব্বানী হত্যাকাণ্ডসহ সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত করে, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে, অবিলম্বে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।”
তিনি বলন, “পাশাপাশি, টিআিইবি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) অধীনে, বাংলাদেশের তৃতীয় পর্যালোচনার সময় সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কিত যে আটটি সুপারিশ সমর্থন করেছিলো সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে সরকারের দায় রয়েছে।”