প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ও রেলের রিপোর্টে স্পষ্ট হচ্ছে করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কারণ

ভারতের ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা

দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির নীল রঙের ওয়াগানের উপর উঠে গেছে সুপারফাস্ট করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন । চারপাশে খেলনার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ট্রেনের অন্য কামরাগুলি। অন্যদিকে ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস তেরছাভাবে উঠে রয়েছে করমণ্ডলের উপর। চারিদিকে বীভৎস দৃশ্য। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার যে ছবি উঠে এসেছে তাতে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। বলা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনা। অনেক পরিবারের খোঁজই মিলছে না। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের কামরাগুলির জানলা ভেঙে ছিন্নভিন্ন দেহ বা দেহাংশ টেনে বের করছে পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, সে নিয়ে নানা মত আছে। সামনে এসেছে ভারতীয় রেলের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট। তবে এক প্রত্যক্ষদর্শী যা বর্ণনা দিয়েছেন তা সাঙ্ঘাতিক।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং রেল সূত্রে যা দাবি করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে সিগন্যালের গোলমালেই এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১২৮৪১ নম্বর শালিমার-চেন্নাই-সেন্ট্রাল করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে আপ লাইনের জন্য সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি কোনওভাবে লুপ লাইনে ঢুকে যায়। সেটা কীভাবে সম্ভব হল তার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে সেটি পাশের ডাউন লাইনে গিয়ে পড়ে। সেই লাইন ধরে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেটি এসে ধাক্কা মারে করমণ্ডলের লাইনচ্যুত কামরাগুলিকে। সেই ধাক্কার কারণেই করমণ্ডলের ইঞ্জিনটি তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে-থাকা মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। দক্ষিণপূর্ব রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, কোনও মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়নি। দু’টি ট্রেনের পাশাপাশি ধাক্কা লাগার ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ব্যাপারটা অনেকটা এইরকম যে, আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে ঢোকেইনি। ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। এর মাঝে ডাউন লাইন দিয়ে বালেশ্বরের দিকে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনের দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়।

কিন্তু মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস কী ভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সিগন্যাল দেওয়ায় কোনও গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের পাশাপাশি ধাক্কা লেগেছে। তাতেই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কিছু কামরা লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লুপ লাইনে দাঁড়ানো মালগাড়ির দিকে হেলে পড়ে। করমণ্ডলের ইঞ্জিন মালগাড়ির উপর উঠে যায়। শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের একাধিক বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এর জেরে সেই ট্রেনের বি২, বি৩, বি৪, বি৫, বি৬, বি৭, বি৮, বি৯, এ১ এবং এ২ কোচ উলটে যায়। এছাড়া ট্রেনের ইঞ্জিন এবং বি১ কোচটি লাইন থেকে ছিটকে যায়। এই দুর্ঘটনার জেরে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের বেশ কয়েকটি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে।