ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী রবিবার ২৮ মে নতুন সংসদ ভবনে ‘সেঙ্গোল’ স্থাপন করবেন। লোকসভায় স্পিকারের আসনের এক পাশে রাখা থাকবে সেটি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার ২৪ মে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। 'সেঙ্গোল' সোনার পাতে মোড়া একটি রাজদন্ড।
‘সেঙ্গোল’ শব্দটির উৎপত্তি তামিল ‘সেম্মাই’ থেকে। স্বাধীনতা, ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায় শাসন ইত্যাদি একাধিক অর্থে এই শব্দটি তামিলে ব্যবহার করা হয়।
ভারতের নতুন সংসদে যে সেঙ্গোল প্রতিষ্ঠা করা হবে সেটি রাখা ছিল উত্তরপ্রদেশে এলাহাবাদে রাষ্ট্রীয় জাদুঘরে। সেখান থেকে সেটি দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন সংসদ ভবনে স্থাপনের জন্য। এটির সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের অন্তিম মুহূর্তের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ১৯৪৭-এর ১৪-১৫ অগস্টের রাতে শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন 'সেঙ্গোল' অর্থাৎ রাজদণ্ডটি জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসাবে। তারপর থেকে সেটি এলাহাবাদের মিউজিয়ামেই রাখা ছিল।
এইভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মূল ভাবনাটি ছিল শেষ গভর্নর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারির। আসলে মাউন্টব্যাটেন-ই প্রথম নেহরুর কাছে জানতে চান ক্ষমতা হস্তান্তর কি শুধু কাগজপত্র বিনিময়ের মধ্য দিয়ে হবে নাকি কোনও প্রতীকি ব্যবস্থা কিছু করা হবে।
নেহরু মতামত চান রাজাজি অর্থাৎ গোপালাচারির। তিনি বেশ কিছুদিন পর নেহরুকে জানান, ভারতে দীর্ঘ সময় রাজত্ব করা চোল রাজবংশের নিয়ম ছিল নতুন রাজার হাতে 'সেঙ্গোল' তুলে দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের। ব্রিটিশের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরেও সেই প্রাচীন ভারতীয় রীতি ফেরানো যেতে পারে। নেহরু সেই প্রস্তাবে রাজি হন। সহমত হন বাকি নেতৃবৃন্দও।
১৯৪৭-এর ১৪ অগাস্ট পূজাপাঠের পর রাত ১১’টায় জওহরলাল নেহরুর দিল্লির বাড়িতে গিয়ে তামিলনাড়ুর মঠের মহন্তরা তাঁর হাতে সেঙ্গোলটি তুলে দেন।পরে মাউন্টব্যাটেনের হাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি গ্রহণ করেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক প্রকাশিত ছবি।
সরকারের নির্দেশে তামিলনাড়ুর একটি মঠে থাকা 'সেঙ্গোল'-এর আদলে নতুন একটি রাজদণ্ড তৈরি করে তৎকালীন মাদ্রাজের নামজাদা অলঙ্কার নির্মাতা সংস্থা ভুম্মিদি বাঙ্গারু ছেট্টি। দুই শিল্পী ভুম্মিদি এথিরাজুলু (৯৬) এবং ভুম্মিদি সুধাকর (৮৮) বর্তমানে চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। 'সেঙ্গোল'টি তৈরির পর বিশেষ বিমানে সেটি দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের মুহূর্তের আবেগ 'সেঙ্গোল'-এর মধ্যে ধরা আছে যেটির সঙ্গে জড়িয়ে ভারতের আদি অকৃত্রিম ন্যায় শাসনের ঐতিহ্য। তাঁর কথায়, "নতুন সংসদ ভবন প্রধানমন্ত্রী মোদীর দূরদর্শিতার একটি পরিচয়। স্পিকারের আসনের পাশে সেঙ্গোল স্থাপনও একটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর।"