বৃহস্পতিবার শ্রীলংকার হাজার হাজার লোক রাজধানীতে মিছিল করেছে এই দাবিতে যে কয়েক মাস ধরে ভারত মহাসাগরের এই দেশকে আচ্ছন্ন করে রাখা চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়ন যেন বন্ধ হয়।
ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক অধিকার কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং অন্যান্যরা রাস্তায় মিছিল করে এবং তারপরে কলম্বোতে বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানোর জন্য সরকারের পদক্ষেপের এবং জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশা কমাতে সরকারর ব্যর্থতার নিন্দা করে।
একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রবি কুমুদেশ বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা সরকারকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছিল, বার্তাটি হচ্ছে,“যারা তাদের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবাদ করে তাদের হয়রানি করা বন্ধ করুন এবং জনগণকে স্বস্তি দিন।"
তিনি বলেন যে সরকার যদি "জনগণের কণ্ঠস্বর শুনতে প্রস্তুত না হয়" তাহলে তারা তাদের বিক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলবে।
শ্রীলংকার জনগণ অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য কয়েক মাস ধরে প্রতিবাদ করে। এই অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে ওষুধ, জ্বালানি এবং রান্নার গ্যাসের মতো অনেক প্রয়োজনীয় আমদানিকৃত জিনিসের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জুলাই মাসে হাজার হাজার লোক রাষ্ট্রপতির বাসভবনে হামলা চালায়, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পালাতে বাধ্য করে এবং পরে তিনি পদত্যাগ করেন।
বিক্ষোভকারীরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনও দখল করে।
দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এর পর থেকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান শুরু করেছেন। নেতা হিসেবে তার প্রথম পদক্ষেপের মধ্যে ছিল সরকারি ভবন থেকে বিক্ষোভকারীদের বের করে দেওয়া এবং মধ্যরাতে তাদের তাঁবু ভেঙে ফেলা।
অধিকার গোষ্ঠীগুলি বলছে যে জুলাইয়ে বিক্রমাসিংহে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সামরিক বাহিনীর ভয় দেখানো, নজরদারি এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছে।
জুলাই থেকে কয়েক ডজন আন্দোলনকারী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্রমাসিংহে যারা অজান্তে বা অন্যদের প্ররোচনায় সহিংসতা করেছে তাদের জন্য নমনীয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তবে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আইন ভঙ্গ করেছে তাদের শাস্তি দেওয়ার সংকল্প প্রকাশ করেছেন।
আরেক ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী ওয়াসান্থা সমরাসিংহে বলেছেন,“আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি যে এই সংগ্রামের সময় হেফাজতে নেওয়া সমস্ত বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হোক এবং এই দমন বন্ধ হোক”।
বিক্ষোভ রাজনীতিতে শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবারের দখলকে ভেঙে দিয়েছে। রাজাপাকসে পদত্যাগ করার আগে, তার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরিবারের অন্য তিন সদস্য মন্ত্রিসভায় তাদের পদ ছেড়ে দেন।
বিক্রমাসিংহে রাজাপাকসের মেয়াদ পূর্ণ করার জন্য সংসদ দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা ২০২৪ সালে শেষ হবে। তিনি জনপ্রিয় নন কারণ তিনি এমন আইন প্রণেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন যারা এখনও রাজাপাকসে পরিবার দ্বারা সমর্থিত, যারা গত দুই দশকের বেশির ভাগ সময় ধরে শ্রীলংকা শাসন করেছে। অনেকে বিক্রমাসিংহেকে রাজাপাকসাদের রক্ষা করার জন্য অভিযুক্ত করেন, যাদেরকে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জন্য ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয় যা এই সংকটের কারণ হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কার স্বাধীন ন্যাশনাল পিস কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক জেহান পেরেরা বলেছেন, "বিক্ষোভে নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার এবং জনগণের জীবনমান অবনতির কারণে" আবার বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন যে লোকেরা আরও অসন্তুষ্ট যে কর্তৃপক্ষ "অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।"
তিনি বলেন, যারা দেশকে এ অবস্থায় এনেছে তাদের কোনো জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া নেই। "সমস্যা সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক নেতারা এমন আচরণ করছেন যেন তারা কিছুই করেননি এবং ফিরে আসার চেষ্টা করছেন, এবং এটি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।"