গণমৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করেছে ইরান

মানচিত্রে মধ্যপ্রাচ্য।

ইরান তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা প্রশমনে বাগদাদের মধ্যস্ততায় আয়োজিত গোপন আলোচনাটি সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে রবিবার (১৩ মার্চ) জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। সৌদি আরব সাম্প্রতিককালের সর্বোচ্চসংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান।

সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের ঘনিষ্ঠ ইরানের ওয়েব সংবাদমাধ্যম নুরনিউজ জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে গত বছরজুড়ে বাগদাদে চলমান আলোচনাটি সরকার একতরফাভাবে স্থগিত করেছে।

ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন যে, সৌদি আরব ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পঞ্চম দফা আলোচনা বুধবার আবার শুরু হওয়ার কথা ছিল।

প্রতিবেদনে ইরানের স্থগিতাদেশের কারণ জানানো হয়নি। তবে হত্যাসহ জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ৮১ জনের মৃত্যুদণ্ড সৌদি আরব কার্যকর পর সিদ্ধান্তটি এসেছে। মানবাধিকার কর্মীদের বিশ্বাস এই দলে তিন ডজনেরও বেশি শিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সৌদি আরবের তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী শিয়ারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে, তাদের সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মত আচরণ করা হয়। সৌদি আরবে শিয়াদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের কারণে অতীতেও আঞ্চলিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশিষ্ট শিয়া ধর্মগুরু নিমর আল-নিমরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম শিয়া মুসলিম দেশ ইরান সুন্নি পরাক্রমশালী সৌদি আরবের সঙ্গে ২০১৬ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ফাঁসির প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ইরানিরা ইরানে দুটি সৌদি কূটনৈতিক মিশনে হামলা চালায়, যা দেশদুটির মধ্যে বছরের পর বছর শত্রুতা সৃষ্টি করে।

শনিবারের শেষার্ধে, গণমৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় পার্শ্ববর্তী দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইনেও শিয়াদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ শুরু হয়।

সৌদি আরব ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তার বিপর্যয়মূলক যুদ্ধের ইতি টানতে বাগদাদের মধ্যস্ততায় গত বছর গোপনে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসে। দুই শত্রু দেশের এই সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক বিপর্যয়ের জন্ম দিয়েছে এবং সৌদি বিমানবন্দর এবং তেল স্থাপনাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারাও সৌদি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে এবং ইরাক থেকে সৌদি আরবে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

বেশ একটা আঞ্চলিক উত্তেজনার সময়েই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনায় বিরতির সিদ্ধান্তটি এল। রবিবার ইরান ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর ইরবিলে মার্কিন কনস্যুলেটের পাশে পরিচালিত একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই হামলাটিকে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলার—যাতে দুই বিপ্লবী গার্ড সদস্যের মৃত্যু হয়েছে—প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

বিশ্ব শক্তির সঙ্গে তেহরানের ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আলোচনা ইতিমধ্যে কোনোরকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। এতে করে কয়েক মাস ধরে চলা আলোচনার বিষয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।