ফ্লোরিডায় দাবানলের বিরুদ্ধে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের যুদ্ধ—খালি করা হয়েছে ১১০০ বাড়ি

ফ্লোরিডার পানামা শহরের বাসিন্দা হেক্টর রিভেরা ও ওয়ান্ডি ব্ল্যাংকো আগুন নেভাতে পানি ঢালছেন। (ছবি- মাইক ফেন্ডার/ ইউএসএ টুডে নেটওয়ার্ক/ রয়টার্স)

তিন বছর আগের ক্যাটাগরি-৫ হারিকেনের প্রভাব কাটিয়ে না উঠতেই ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডেলে ছড়িয়ে পড়েছে বিশাল দাবানল। রবিবার (৬ মার্চ) সেখানকার একটি নার্সিং হোমে থাকা প্রবীণদের পাশাপাশি প্রায় ১ হাজার ১০০টিরও বেশি বাড়ির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷

অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা বার্থা সোয়াম্প রোডে ৯ হাজার একর (প্রায় ৩ হাজার ৬৪২ হেক্টর) এলাকার এবং অ্যাডকিন্স অ্যাভিনিউয়ে ৮৪১-একর (৩৪০-হেক্টর) এলাকার আগুন নেভাতে প্রাণপণ লড়ছেন। বিশাল এই দাবানল সেখানে অবস্থিত ঘরবাড়িকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ফ্লোরিডার বে কাউন্টিতে কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ বাড়ির বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছে। সপ্তাহান্তে অ্যাডকিন্স অ্যাভিনিউয়ের আগুনে শুক্রবার গভীর রাতে দুটি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং আরও ১২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস রবিবার বিকেলে পানামা সিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর বার্থা সোয়াম্প রোডের আগুনকে “বিশাল” অভিহিত করে বলেছেন “আগুন খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে”।

রবিবার পানামা সিটিতে তৃতীয় দফা আগুন লাগার পর একটি ১২০ শয্যার সরকারি নার্সিং হোম থেকে প্রবীণ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বে কাউন্টি জেলের সামনে কয়েকটি বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয় যাতে প্রয়োজন হলে জেলের ১ হাজার ৩০০ বন্দীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়।

ফ্লোরিডা বন বিভাগের মতে, ২০১৮ সালে হারিকেন মাইকেলে ৭২ মিলিয়ন টন গাছ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। শুকনা ওই গাছগুলো বে কাউন্টির দাবানলের জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে। হারিকেনটির আঘাতে ১৬ জনের মৃত্যু হয় এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা জানেন না কবে বাসিন্দারা তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের জন্য বে কাউন্টি ফেয়ারগ্রাউন্ডে একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

বে কাউন্টির শেরিফ টমি ফোর্ড বলেছেন, “আমি জানি মানুষ তাদের বাড়িতে ফিরতে না পেরে হতাশ হচ্ছেন। এক মিনিটের নোটিশে ঘটনাটি ঘটেছে এবং তাতে সত্যিই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আমরা বাসিন্দাদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুমতি দেব।”

অ্যাডকিন্স অ্যাভিনিউয়ের আগুন শুক্রবার থেকে বে কাউন্টিতে ছড়ায়। এতে কমপক্ষে ৬০০টি বাড়ির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং রবিবার পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন যে, আগুনটি ১ হাজার ৪০০ একর (৫৬৭ হেক্টর) এলাকা জুড়ে ছড়িয়েছিল। তবে রবিবার বিকেলে এর আকৃতি কিছুটা ছোট হয়ে আসে।

আকারে অপেক্ষাকৃত বড় বার্থা সোয়াম্প আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল শুক্রবার নিকটবর্তী উপসাগরীয় কাউন্টিতে। কিন্তু শনিবার বে এবং ক্যালহাউন কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই আগুনের ব্যাপকতা অনেক বাড়িঘর থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে বাধ্য করে। রবিবার পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

“এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে কোনো দাবানল এত বড় হতে পারে”, বে কাউন্টি ইমার্জেন্সি সার্ভিসের প্রধান ব্র্যাড মনরো বলেন। “আপনি যদি এর ওপর দিয়ে উড়ে যান দেখবেন এটি কতটা অবিশ্বাস্য। এই আগুন কতটা বড়, শক্তিশালী এবং ভয়াবহ তা বোঝা কঠিন।”

ফ্লোরিডা ফরেস্ট সার্ভিসের হেলিকপ্টারগুলো শুক্রবার থেকে অ্যাডকিন্স অ্যাভিনিউয়ের আগুনে ১ লাখ ৩ হাজার গ্যালন (প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার লিটার) পানি ঢেলেছে৷ এ ছাড়া ২৫টি বুলডোজারও ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরো ফ্লোরিডা থেকে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাউন্টিতে মোতায়েন করা হয়েছে।

বর্তমানে ফ্লোরিডাজুড়ে প্রায় ১৫০টি দাবানলে প্রায় ১২ হাজার ১০০ একর (প্রায় ৪ হাজার ৯০০ হেক্টর) এলাকা জ্বলছে। উল্লেখ্য, রাজ্যটিতে দাবানলের মরসুম সবে শুরু হয়েছে।