নরেন্দ্র মোদী ২০১৪'য় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এ পর্যন্ত বিরোধী দল এবং নানা ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচক মিলিয়ে ৫৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে সিবিআই, ইডি, আয়করের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন তদন্ত এজেন্সি। সেখানে মোদী জমানার এই সাত বছরে বিজেপি ও তাদের সহযোগী দলের মাত্র ৩৯ জন নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সব এজেন্সি।
একটি সর্ব ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, এনডিটিভি সমীক্ষায় এই তথ্য সামনে এসেছে। আগের ইউপিএ-টু সরকারের তুলনায় মোদীর সাত বছরে সরকারের সমালোচকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩৪০ শতাংশ।
বহু দিন ধরেই বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে আসছে মোদী সরকার কোনও ধরনের সমালোচনা শুনতে রাজি নয়।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই এই ব্যাপারে সরব। তার বক্তব্য, "দেশে এজেন্সি রাজ চলছে। সিবিআই, ইডি, আয়কর দপ্তরের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপদস্থ করা।"
যে ৫৭০ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের মামলা ঠুকেছে মোদী সরকার তাদের মধ্যে ২৫৭ জন হলেন রাজনীতিক এবং ১৪০জন তাদের আত্মীয় পরিজন কিংবা সহযোগী। তালিকায় আছেন নাগরিক সমাজের লোকজন এবং বলিউড-সহ সিনেমা জগতের মানুষেরাও। এছাড়া বড় সংখ্যায় আছে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকেরা।
দিন কয়েক আগে উত্তরপ্রদেশে বেশ কয়েকজন শিল্পপতি এবং নেতার বাড়ি, অফিসে হানা দেয় আয়কর দপ্তর। তাদের অনেকেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবের ঘনিষ্ঠ। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের তোরজোড় চলছে এবং সেখানে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে অখিলেশই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ।
মোদী জমানায় ভোটের আগে বিরোধী শিবিরে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হানা নতুন নয়। মাস সাতেক আগে বাংলার বিধানসভা ভোটের প্রচারের সময়ও দফায় দফায় এজেন্সির হানাদারি চলে। আবার ভোটের ফল প্রকাশের দিন কয়েকের মধ্যেই তৃণমূলের কয়েকজন বর্ষীয়ান নেতা ও মন্ত্রীকে সিবিআই ঘুম থেকে তুলে গ্রেপ্তার করে।
দেখা যাচ্ছে, বিরোধী শিবিরের যে নেতা-মন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় এজেন্সি টার্গেট করেছে তাদের সবচেয়ে বেশি হলেন কংগ্রেসের, ৭৫জন। দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ৩৬জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। বিরোধী শিবিরের প্রথমসারির দলগুলিঢ় পাশাপাশি ছোট দলও আছে।
সংবাদ মাধ্যমের কর্তা এবং সাংবাদিক মিলিয়ে ২৯জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে বিভিন্ন এজেন্সি। উত্তর ও মধ্য ভারতে জনপ্রিয় হিন্দি কাগজ দৈনিক ভাস্কর করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের টিকা নীতি এবং কোভিড মোকাবিলা কর্মসূচির গলদ তুলে ধরেছিল। তারপরই আয়কর হানার মুখে পড়তে হয় তাদের।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি ইউপিএ-টু অর্থাৎ মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় কংগ্রেস সরকারের সময়ের সঙ্গে তুলনা করে দেখিয়েছে, ২০০৯-থেকে ২০১৪-র মধ্যে সরকারের সমালোচকদের বছরে গড় ১৭জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত এজেন্সিগুলি। মোদী জমানায় যা বেড়ে হয়েছে ৭৫।