বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনা নিয়ে মারামারির ঘটনায় মামলার প্রধান অভিযুক্ত আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথীসহ চার আইনজীবীর আগাম জামিন দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।
বুধবার (২০ মার্চ) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন।
জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান বুলু আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন।
জামিন পাওয়া অপর তিন অভিযুক্ত হলেন—আইনজীবী শাকিলা রৌশন, ব্যারিস্টার চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা ও মারামারি ঘটনার প্রেক্ষাপটে বরখাস্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জাকির হোসেন।
১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদের জামিনের আবেদন দায়ের করা হয়।
এর আগে ১৮ মার্চ (সোমবার) বিচারপতি মো. সেলিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের বিচারপতি নাহিদ সুলতানা যুথীর জামিন আবেদন শুনতে বিব্রতবোধ করেন।
পরে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে তিনি বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দেন।
উল্লখ্য, এবারের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয় ৬ ও ৭ মার্চ। ভোট গণনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল ও মারধরের ঘটনা ঘটে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার হন সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক ৮ মার্চ (শুক্রবার) বেলা ৩টায় ‘দিনের আলোতে’ ভোট গণনা চাচ্ছিলেন। এ বিষয় নিয়েই একপর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়। শুক্রবার ভোরে মারামারির ঘটনাও ঘটে। যেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে আক্রমণ করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেটি ‘বহিরাগতের হামলা’ হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ তাঁকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ৮ মার্চ (শুক্রবার) রাতে মামলা করেন। যেখানে এই নির্বাচনের স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি এবং বিএনপি অনুসারী প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। শুক্রবার রাতেই এই মামলার অভিযুক্ত বিএনপি অনুসারী ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর নাহিদ সুলতানা যুথীর বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করে।
এরপর ৯ মার্চ (শনিবার) সন্ধ্যায় বিএনপি অনুসারী সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে তাঁর ৪ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার একটি আদালত।
শাহবাগ থানায় করা মামলায় নাহিদ সুলতানা যুথী প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ঘটনাবহুল নির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে ১০ জন নির্বাচিত হন। সম্পাদক পদসহ এই প্যানেলের নির্বাচিতরা হলেন- সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির এবং সদস্য পদে মো. বেলাল হোসেন, মো. রায়হান রনি, রাশেদুল হক খোকন ও খালেদ মোশাররফ।
অন্যদিকে, বিএনপি অনুসারী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতিসহ ৪টি পদে নির্বাচিত হন। নির্বাচিতরা হলেন- সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী অভি, শফিকুল ইসলাম ও ফাতিমা আক্তার।