বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রের দুই সংস্থা, এনডিআই ও আইআরআইয়ের প্রতিবেদন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “এনডিআই ও আইআরআই যে রিপোর্ট দিয়েছে, আমরা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি।”
তিনি বলেন, “সেখানে তারা স্বীকার করে নিয়েছে, অন্যান্য সময়ে যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেসব নির্বাচনের তুলনায় এবার কম সহিংসতা হয়েছে।”
রবিবার (১৭ মার্চ) বিকেলে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন হাছান মাহমুদ।
“বাংলাদেশে যে সব নির্বাচন এর আগে হয়েছে বা আমাদের উপমহাদেশে যে নির্বাচন হয়; সেই তুলনায় এ নির্বাচনের মান অনেক উন্নত ছিলো। একটি সুন্দর ও ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে;” উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “এনডিআই ও আইআরআই তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। আমরা সেটা দেখছি। কিন্তু, দেশে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপিসহ তার মিত্ররা অংশগ্রহণ করেনি।”
“বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা শুধু নির্বাচন বর্জন নয়, নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে। সুতরাং তাদের রিপোর্টে এবং যারা এ নিয়ে বক্তব্য রাখেন, বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশে তাদের এ বিষয়টাও বলতে হবে;” আরো বলেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি যে নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে এবং শুধু প্রতিহত নয়, নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য সহিংসতা করেছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে সে বিষয়গুলোও তো আসতে হবে।
সরকার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “এটা প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণ করার বিষয় নয়। তারা প্রতিবেদন দিয়েছে, আমরা প্রতিবেদনটা দেখছি এবং আমরা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র বা অন্য কেউ যে পর্যবেক্ষণ দিচ্ছে, সেগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি।”
এনডিআই/আইআরআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, চলাকালীন ও পরে সম্ভাব্য নির্বাচনী সহিংসতা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশে প্রেরন করা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট মিশন (টিএএম) আজ (১৬ মার্চ) চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এই প্রতিবেদনে, বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে সহিংসতার ঝুঁকি প্রশমন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইআরআই ও এনডিআই’র তুলনামূলক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারের নির্বাহী ও আইন বিভাগ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীজনদের কাছে সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মিশন সদস্যগণ অবগত হয়েছেন যে ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়কাল, প্রচারের সময়কাল, নির্বাচনের দিনসহ অন্যান্য সময়ে, পূর্ববর্তী নির্বাচন চক্রের তুলনায় শারীরিক এবং অনলাইন সহিংসতা কম হয়েছে। এটি হয়েছে প্রাথমিকভাবে দেশব্যাপী কার্যকর নির্বাচনী প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতির কারণে এবং দেশের নিরাপত্তায় সরকারের বাড়তি নজর দেয়ায়।
তা সত্ত্বেও, জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত মান ক্ষুন্ন হয়েছে যেসব ঘটনার কারণে, তা হলো রাষ্ট্র, শাসক দল, এবং বিরোধীদের সহিংসতা; সেইসাথে একটি প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ দ্বারা চিহ্নিত করা হয় শূন্য-সমষ্টির রাজনীতি, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সহিংসতা, নাগরিক স্বাধীনতার সংকোচন, এবং বাক স্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতার অবনতি।
এনডিআইয়ের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ বলেন, “এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতে আরো শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য একটি মূল্যবান রোডম্যাপ হিসেবে অবদান রাখবে। অহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নাগরিক সমাজ-সহ সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমন্ডল জুড়ে নেতাদের নির্বাচনী রাজনীতির নিয়ম, অনুশীলন এবং নিয়মগুলোর সংস্কার করার প্রয়োজন রয়েছে।”
আইআরআই’র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও বলেন, “নির্বাচনে সহিংসতা নাগরিকদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। বাংলাদেশের নির্বাচনকে পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক করতে হলে, সব পক্ষকে অহিংস রাজনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।”
বাংলাদেশে অবস্থানকালে টিএএম-এর স্বীকৃত পাঁচজন দীর্ঘমেয়াদী বিশ্লেষক, নির্বাচন কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মী, রাজনৈতিক পরিমন্ডলে রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সংগঠনসহ যুবক, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মিশনের সাথে বৈঠক করেছেন।
মিশনটি একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশন (পিইএএম) অনুসরণ করে, যা এনডিআই এবং আইআরআই ৮ থেকে ১১ অক্টোবর, ২০২৩ পর্যন্ত পরিচালনা করেছে। পিইএএম-এর পর্যবেক্ষণে কারিগরি মূল্যায়ন কাঠামো ও পরিধি সম্পর্কে অবহিত করা হয়; যা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘের অনুমোদিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ঘোষণাপত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো।
আইআরআই এবং এনডিআই হলো নির্দলীয়, বেসরকারী সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং অনুশীলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করে। ইনস্টিটিউটগুলো গত ৩০ বছরে ৫০ টির বেশি দেশে সম্মিলিতভাবে ২০০টির বেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।