অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধের আহবান জানিয়েছেন সেনেটর ডিক ডারবিন


বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস
বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস

যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর ডিক ডারবিন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সেনেটর ডারবিন বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে মূল্য দেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং আমি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রশংসা করি।”

“কিন্তু, আপাতদৃষ্টে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা অবসানের ব্যর্থতা দুই দেশের অংশীদারিত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে;” যোগ করেন সেনেটর ডারবিন।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর ডিক ডারবিন
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটর ডিক ডারবিন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) সেনেটর ডারবিন লিখেন, “রাষ্ট্রদূত ইমরানের সঙ্গে বৈঠকে আমি প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধের আহবান জানিয়েছি।”

মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে ম্যাথিউ মিলার

এদিকে, গত ১১ মার্চ ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রসঙ্গে কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। সংবাদ সম্মেলনে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পিটার হাসের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার আহবানও জানিয়েছেন তিনি। আপনি জানেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিকভাবে ড. ইউনূসকে হয়রানি করছে। কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, “আপনারা এর আগেও মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাগুলো নিয়ে আমার কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা শুনেছেন, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের আইনের অপব্যবহার করে ড. ইউনূসকে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হতে পারে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার ক্ষমতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করেন।”

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা এবং আপিল

এ বছরের ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেয় ঢাকার একটি শ্রম আদালত। আরেকটি ধারায়, তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করেছিলো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর, ড. ইউনুসের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে কারাগারে যেতে হয়নি ড. ইউনূসকে।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আদালতে সাংবাদিকদের ড. ইউনূস বলেছিলেন, “যে অপরাধ করিনি, সেই অপরাধর জন্য শাস্তি পেলাম।”

এই মামলা ছাড়াও, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলাও রয়েছে। এই মামলাকে হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবীরা।

এদিকে, শ্রম আদালতের দেয়া ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় চ্যালেঞ্জ করে, ২৮ জানুয়ারি (রবিবার) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ।

বিস্তারিত শুনানির জন্য আদালত আপিল গ্রহণ করে এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “প্রাথমিক শুনানির পর, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল আপিল আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে এবং এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রম আদালতের নথি তলব করেছে।”

মামলার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য

অন্যদিকে, বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না।

১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

আনিসুল হক বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য সরকার কিছু করছে না। তার বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না। যে মামলা হয়েছে, সেটা শ্রমিকরা করেছিলো, তারপর শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছে। আমি কেবল বলবো, দেশ আমাদের সবার। নির্বাহী, আইনসভা কিংবা বিচার বিভাগ সব বিষয়ে দেশের অর্জনই দেশের মানুষের।”

আনিসুল হক আরো বলেন, “অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে; তার (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আরো বলা হচ্ছে, আমরা তাকে হয়রানির জন্য এটা করছি।”

এ ছাড়া, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে চলছে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অত্যন্ত স্বচ্ছ। অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “তার জামিন পাওয়ার বিষয়টিই প্রমাণ করে বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে চলছে।”

হাছান মাহমুদ বলেন, ড. ইউনূসের সংগঠনের বঞ্চিত কর্মীরা তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করেছে, সরকার এতে কোনো পক্ষ নয়।

XS
SM
MD
LG