মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জেরে প্রাণ বাঁচাতে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৫০ জন সদস্য সোমবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সোমবার বিকেলে ৪৫ নম্বর পিলারের জামছড়ি গ্রামে পালিয়ে আসেন তারা। নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের রাখা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুজাহিদ উদ্দিন।
এর আগে সোমবার সকালে ৪৬ নম্বর পিলার দিয়ে পালিয়ে আসে ২৯ জন বিজিপি সদস্য। সব মিলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপির সদস্য সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ১৭৯ জন।
ডিসি মুজাহিদ উদ্দিন জানান, সকালে আশ্রিত ২৯ জন বিজিপি সদস্যকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হযেছে। পরে আসা বাকি ১৫০ জনকেও একই স্থানে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১ বিজিবি) অধীনস্থ জামছড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী পুলিশের অংথাপায়া ক্যাম্প থেকে ২৯ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি তাদের হেফাজতে রেখেছে।
বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রথমে ২৯ জন ও পরে ১৫০ জন বিজিপি সদস্য প্রবেশ করে বাংলাদেশে। বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে বিজিপি, সেনাসদস্য ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাসহ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৩০ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল।
১৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ।
ফেরত পাঠানো ৩৩০ জনের মধ্যে ছিল ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ৪ জন বেসামরিক নাগরিক।
মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘর্ষ
এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে।
জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইন আন্দোলনের প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত সামরিক শাখা আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন চায়।
আরাকান আর্মি সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠীর একটি জোটের সদস্য। তারা সম্প্রতি মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি কৌশলগত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সঙ্গে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে একত্রে কাজ করে আরাকান আর্মি। এই জোট, ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর চীন সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে একটি সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে এই অভিযান মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ জোটের বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, তারা ২৫০টির বেশি সামরিক চৌকি, পাঁচটি সরকারি সীমান্ত ক্রসিং এবং চীন সীমান্তের কাছে একটি বড় শহরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান শুরু করে। যা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। তখন সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের ফলে, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অন্তত ৭ লাখ ৪০ হাজার সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।