রবিবার অস্কার কর্তৃপক্ষ এমন কিছু করতে যাচ্ছে, যা অনেক কাল ধরে তারা করেনি। অস্কার এবার তাদের শীর্ষ পুরস্কারটি দিতে যাচ্ছে যাচ্ছে এসময়ের একটি ব্লকবাস্টার সিনেমাকে।
অস্কার বছরের পর বছর ধরে, ‘দ্য শেইপ অফ ওয়াটার’ এবং ‘নোমাডল্যান্ড’-এর মতো স্বল্প ব্যপ্তির চলচ্চিত্রগুলোকে উৎসাহিত করে আসছে।
এবার সেরা সিনেমার পুরস্কারের জন্য ফেভরিট ছবি ওপেনহেইমার। ছবিটির টিকিট বিক্রি হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের বেশি। এই প্রবণতা অস্কার পুরস্কার লাভে বড় চলচ্চিত্রের প্রাধান্যের ইঙ্গিত দেয়। গত দুই দশকে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে, ২০১২ সালে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছিলো অ্যাফ্লেকের ‘আরগো’। অভ্যন্তরীণ বাজারে এই ছবির আয় ছিলো ১০ কোটি ডলারের কিছু বেশি।
সব সময় দেখা গেছে, একাডেমির নির্বাচকদের অভিমত স্বাধীন ভাবে নির্মিত ছোট পরিসরের ‘মুনলাইট’ ‘নোম্যাডল্যান্ড’ এবং ‘কোডা’-এর মতো ছবিগুলোর পক্ষে থাকে।
আরো দেখা গেছে, এমন অনেক ছবির ক্ষেত্রে তাদের অভিমত থাকে, যেগুলোর উত্তর আমেরিকার বক্স অফিস রেকর্ড শূন্যের কোঠায়।
গত বছর অসংলগ্ন ও অস্কার অযোগ্য স্বাধীন চলচ্চিত্র ‘এভরিথিং এভরিহোয়্যার অল অ্যাট ওয়ান্স’ একাডেমি পুরস্কারের মৌসুম জুড়ে অনালোচিত ছবি হিসেবেই ছিলো। হঠাৎ করেই ছবিটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড আলোচনার পাদপ্রদীপে আসে।
তিন ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতেছিলো ‘আর্গো’। এর বাজেট ছিলো ৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ২২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। তার পরও ‘আর্গো’ ওপেনহেইমার-এর ধারে কাছে নেই বলেই ধরা যায়।
ওপেনহেইমার-এর সাথে তুলনা করতে গেলে, ফিরে তাকাতে হবে ২০০৪ সালের অস্কার আসরের দিকে। সেই আসরে পিটার জ্যাকসনের ‘দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস: রিটার্ন অফ দ্য কিং’ ১১ ক্যাটাগরিতে অস্কার জেতে। এই ছবির আয় ছিলো ১১৬ কোটি ডলার।
ধারণা করা হচ্ছে, ক্রিস্টোফার নোলানের বায়োপিক ওপেনহেইমার, রবিবাবের আসরের সব ক্ষেত্রে সম্মুখ সারিতে থাকবে।
চলচ্চিত্র বিষয়ক পছন্দগুলো সময়ের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে।তবুও এটা একটা লক্ষণীয় বিষয় যে ‘রিটার্ন অফ দ্য কিং’ এখনো অপ্রতিরোধ্যভাবে ব্লকবাস্টার ছবি।
আর, এমন সময়ে ছবিটি ব্লকবাস্টার, যখন ‘অ্যাভাটার’, ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ও ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’ ‘দ্য ডার্ক নাইট’ এর মতো ছবি এবং বিস্ময়কর সমগ্র সিনেমা জগৎ এক সঙ্গে বিরাজমান।
এটা হলো চলচ্চিত্র জগতের সংস্কৃতির একটি পরিবর্তন। যে পরিবর্তন পুরো হলিউড পছন্দ করেনা। যারা এই পরিবর্তন পছন্দ করেন না, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন মার্টিন স্করসেস। তিনি এই বছর সেরা পরিচালক মনোনীত হয়েছেন। আর, এর অন্যতম কারণ হলো, সমাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্কার বিচারকরা প্রথাগত ছবি কম পছন্দ করছেন। যেমন, ২০২০ সাল সেরা ছবি নির্বাচিত হয়েছিলো ‘প্যারাসাইট’। আর, এটি ছিলো ইংরেজি ভাষার বাইরের প্রথম অস্করা বিজয়ী ছবি।
এই বছর অস্কার বাস্কেটে রয়েছে দুটি বিলিয়ন-ডলার ব্লকবাস্টার ছবি।এগুলো হলো, ওপেনহেইমার ও বার্বি। ছবিগুলো আশা জাগাচ্ছে যে অস্কার টেলিকাস্টকে টাইটানিকের বছরের এক তৃতীয়াংশ দর্শকের সমান স্তরে পৌঁছে দেবে। গত বছর অস্কার টেলিকাস্ট দেখেছিলেন ১ কোটি ৮৭ লাখ দর্শক।
হোস্ট জিমি কিমেল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ক্রমশ অপ্রচলিত আর ব্যাপক সংকোচন প্রবণতা থেকে হলিউডকে বের করে আনতে সহায়তা করেছে ‘ওপেনহাইমার’। ছবিটি এমন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণের পথ তৈরি করছে, যাতে সবাই এগিয়ে যাবার লড়াইটা করতে পারে।
সাম্প্রতিক কালে নেটফ্লিক্ষ ছাড়া স্ট্রিমিং থেকে সকলের আয় হ্রাস পেয়েছে। ধর্মঘটের কারনে প্রযোজনায় বিলম্ব ঘটছে। এর ফলে, ২০২৪ সালে সিনেমা হলে ব্যাপক আকারে মন্দা দেখা দেয়। ওপেনহেইমারের সাফল্য এই মন্দা কাটাতে উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে।
বহুল আলাচিত তিন ঘন্টার চলচ্চিত্র ওপেনহেইমার, ‘অ্যান্ট-ম্যান’ ও ‘অ্যাকুয়াম্যান’ এর সম্মিলিত অবস্থানকে ছাড়িয়ে যায়। যা, স্টুডিও ফিল্ম মেকিং সম্পর্কিত ধারণাকে আরো দৃঢ় করে।