অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশকে রাখাইনে চলমান সংঘাতের গতিপ্রকৃতি বুঝতে হবে, গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা


বিআইপিএসএস আয়োজিত মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাত নিয়ে আলোচনার বক্তারা
বিআইপিএসএস আয়োজিত মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাত নিয়ে আলোচনার বক্তারা

মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের গতিপ্রকৃতি বাংলাদেশকে বুঝতে হবে; এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস)।

আলোচকরা উল্লেখ করেন, ভারত, চীন ও বিশ্বের অন্য শক্তিশালী দেশগুলোর জন্য রাখাইন গুরুত্বপূর্ণ।

বিআইপিএসএস-এর প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এন এম মনিরুজ্জামান বলেন, “মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি বা সংঘাতময় পরিস্থিতি আমাদের গুরুত্ব দিয়ে বুঝতে হবে।” তিনি যোগ করেন, “বিশেষ করে মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্যের ঘটনা প্রবাহ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হাবে।”

বিআইপিএসএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাফকাত মুনির, রোহিঙ্গা সংকট এবং এর বাইরে চলমান মিয়ানমারের সংকটের গতিপ্রকৃতি বোঝার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

মনিরুজ্জামান গত অক্টোবরে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের উত্থানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ভূমিকা এবং চলমান অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “রাখাইন শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, চীন, ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য বড় শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

“চীনের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিয়াকপিউ-তে তাদের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর রয়েছে; যা চীনের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর, ভারতের জন্য রয়েছে কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট; এর জন্য সীমান্তবর্তী রাজ্য চিন ও রাখাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন চলমান পরিস্থিতিকে একটি ক্রমবর্ধমান গৃহযুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, “সেখানে এখন সশস্ত্র বিদ্রোহ ও বেসামরিক বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে তাতমাদাও (মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী)।”

ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবগুলো নিয়ে আলোচনা করেন তৌহিদ হোসেন। এই অঞ্চলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি এবং সংঘাতের উৎস ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকৃতির ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশের জন্য সম্পদ নিয়ন্ত্রণ ও রোহিঙ্গা ইস্যুর কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন তৌহিদ হোসেন।

মিয়ানমারে দায়িত্বপালনকারী বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে মেজর জেনারেল মো. শহীদুল হক, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের সংঘাতের বিপরীত প্রকৃতি নিয়ে একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

শহীদুল হক বলেন, “কিছু অনুমানের কারণে মিয়ানমার বিচ্ছিন্ন হবে না।” তাতমাদাও শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করবে এবং মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে সংঘাতের অনন্য মাত্রা বোঝার গুরুত্বের ওপর জোর দেবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

শহীদুল হকের মতে, পূর্ব সীমান্তে লড়াইয়ের গতি-প্রকৃতি পশ্চিম সীমান্তের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক। “মিয়ানমারের প্রতিটি অঞ্চল, তাদের স্থিতিশীলতার জন্য নিজস্ব চ্যালেঞ্জ এবং প্রভাব উপস্থাপন করে;” তিনি যোগ করেন।

শহীদুল হকের মতে, একটি অঞ্চলে বিপর্যয় সামগ্রিকভাবে মিয়ানমারের জন্য সর্বনাশ নয়। তিনি আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চ্যানেল খোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ইউল্যাবের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক সুদীপ চক্রবর্তীর অভিমত, মিয়ানমারের চলমান অস্থিরতা এবং এর আঞ্চলিক প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশকে কৌশলগত পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।

এই সংকটে আসিয়ানের আরো বড় ভূমিকা পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। তারা আঞ্চলিক রাজনীতির জটিলতা নিরসনে, বাংলাদেশের একটি সক্রিয় ও উদ্ভাবনী কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করার অপরিহার্যতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

XS
SM
MD
LG