অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান ফর্টিফাই রাইটসের


মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে শত শত বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে শত শত বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দেশটিরর বর্ডার গার্ড অব পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর করা অপরাধ ও নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সঙ্গে একত্রিত হয়ে তদন্ত করতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটস।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সংস্থাটি এ আহ্বান জানায়।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে শত শত বিজিপি সদস্য পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

বাংলাদেশে সহায়তা ও সুরক্ষার পাশাপাশি অতীতে এই বিজিপি সদস্যরা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল কি না, সেটি পর্যালোচনার ওপর জোর দিয়েছেন ফর্টিফাই রাইটসের সিইও ম্যাথু স্মিথ।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীসহ পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতে এটি সহায়তা করবে। এই সীমান্তরক্ষীদের কাছে এমন তথ্য থাকতে পারে যেসব মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও অন্য অপরাধের জন্য অপরাধীদের জবাবদিহির মুখোমুখি করতে সাহায্য করতে পারে। এ বিষয়ে তাদের ওপর সঠিকভাবে তদন্ত করা উচিত বলেও মনে করেন স্মিথ।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হিসাব অনুযায়ী, ৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ২৬৪ জন বিজিপির সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে; যাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন গুরুতর আহত, যারা এখন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসাধীন।

কক্সবাজারে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আগে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের নিকটবর্তী জেলা বান্দরবানে থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

এর আগে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সংঘটিত হওয়া মিয়ানমারের পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো অপরাধ তদন্তের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসি অফিস অফ দ্য প্রসিকিউটরকে (ওটিপি) অনুমোদন দেয়। এ তদন্ত প্রায় চার বছর ধরে চলছে। আদালত এখনো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা অপরাধসংক্রান্ত কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেনি।

২০১০ সালে বাংলাদেশ আইসিসির একটি রাষ্ট্রীয় পক্ষ হয়ে মিয়ানমারের অভিযুক্ত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে আইসিসির সঙ্গে কাজ করেছিল।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মিও উইন তুন এবং জাও নাইং তুন নামে মিয়ানমারের দুজন সামরিক সদস্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এসে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রয় চেয়েছিল। তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। রোম সংবিধির একটি রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে ঢাকা আইসিসিকে এই দুই সাবেক সৈনিকের উপস্থিতি সম্পর্কে জানায়।

পরে এই দুই সেনাকে হেগে স্থানান্তরিত করা হয়। তারাই প্রথমবারের মতো মিয়ানমার থেকে আইসিসির হাতে আসা অপরাধী।

ফর্টিফাই রাইটস মনে করছে, মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহে বাংলাদেশেরও উচিত মিয়ানমারবিষয়ক আন্তর্জাতিক স্বাধীন ব্যবস্থার (আইআইএমএম) সঙ্গে সমন্বয় ও সহযোগিতা করা। মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ২০১৯ সালে আইআইএমএম গঠন করে।

২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগণের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গণহত্যা চালায়। শত শত গ্রাম ধ্বংস করে, হত্যা-ধর্ষণ আর নৃশংস অত্যাচার চালায়। প্রায় ৭ লাখেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

ফর্টিফাই রাইটস, যুক্তরাষ্ট্র সরকার, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন, রোহিঙ্গাদের সংঘঠনগুলোসহ অন্যরা এই হামলাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

XS
SM
MD
LG