বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার সম্পন্ন করতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সরকার তা নেবে।
রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে , সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
আনিসুল হক বলেন, “আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ধরা হবে। হত্যার বিচার হারিয়ে যাবে না। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে, যে পদক্ষেপ সরকারের নেয়া উচিত সেটা সরকার নেবে।”
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে র্যাব ব্যর্থ কি না এবং এই তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা হবে কি না?
জবাবে আনিসুল হক বলেন, “র্যাব তদন্তে ব্যর্থ সেটা বলবো না। তবে, তদন্তের প্রয়োজনে, পরিবর্তন দরকার হলে সেটাও করবো। ঘটনা যেভাবে ঘটেছে, যে কোনো সংস্থার জন্য এটা একটু কঠিন।”
সাগর-রুনির মৃত্যুবার্ষিকী ১২ ফেব্রুয়ারি। এখনো বিচার না হওয়ায় পরিবারের হতাশা প্রকাশ করেছে; এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আমাদেরও হতাশা ছিলো।
তিনি বলেন, “কারণ হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচারকার্য শেষ করেছেন। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও করেছেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখন আর নেই।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অহেতুক গ্রেপ্তার বা কারাগারে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
তবে আদালত ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে রায় দেবেন তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্টদের বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।
এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।
এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।