সম্প্রতি সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ এবং যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে বিএসএফ ও বিজিবি একযোগে কাজ করবে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন।
তিনি আরও জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের আমন্ত্রণে তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরের অংশ হিসেবে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ভারত সফর করবেন।
বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে তারা আশা করছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, যোগাযোগ, জ্বালানি সহযোগিতা ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে।
উল্লেখ্য, এ বছরের ২২ জানুয়ারি ভোরে যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারত থেকে গরু আনার সময় বিষয়টি টের পেয়ে বিজিবি সদস্যরা চোরাকারবারিদের ধাওয়া দিলে তাঁরা ভারত সীমান্তে ঢুকে পড়েন। এ সময় বিজিবি সদস্য মো. রইশুদ্দীন ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে যান।
প্রথমে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পরপরই বিজিবি ও বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করে। পরে জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বিজিবি সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। এরপর ২৪ জানুয়ারি দুপুরে মো. রইশুদ্দীনের লাশ হস্তান্তর করা হয়।
বিজিবি সদস্য মো. রইশুদ্দীনের নিহত হওয়ার ঘটনায় ২২ জানুয়ারি দিবাগত রাতে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল জামিল স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বিএসএফের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে তীব্র প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্তের দাবি বিএনপির
এদিকে বিজিবি সদস্য মো. রইশুউদ্দীন নিহত হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত দাবি করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে দলটির স্থায়ী কমিটি এই দাবি করে।
সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ রক্তক্ষয়ী খেলা খেলছে অভিযোগ করে দলটির স্থায়ী কমিটি বলেছে, বিগত সাত বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে ২০১ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত হওয়ার তীব্র নিন্দা জানায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি বিএসএফের ব্যাখ্যাকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে বলেছে, কোনো বিজিবি সদস্য লুঙ্গি ও টি-শার্ট পরে চোরাকারবারি দলের সঙ্গে যেতে পারে না। “ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুমও বিএসএফের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়।”
উল্লেখ্য, ঘটনার পর বিএসএফ এক বিবৃতিতে দাবি করে, নিহত বিজিবি সদস্য সাদা পোশাকে চোরাকারবারিদের সঙ্গে ছিল।
দলটি আরও বলেছে, বিএসএফের বিবৃতিটি বানোয়াট এবং ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের 'আধিপত্যবাদী' মনোভাবে উৎসাহিত হয়ে বাহিনী কেবল তাদের হত্যাকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
“বিএসএফের অপরাধ এবং তাদের নম্রতার মধ্যে সব সময়ই বিশাল ব্যবধান থাকে। তাদের (বিএসএফ) মনোভাব থেকে এমন ধারণা পাওয়া যায় যে, তারা এখনো আদিম ও মধ্যযুগ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।”
এতে আরও বলা হয়, রইশুউদ্দীন হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএসএফের মনগড়া বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
“ভারতের উচ্চাভিলাষী নীতির কারণে সীমান্তে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না।”