অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ নির্বাচন: হাবিবুল আউয়াল আশাবাদী ‘ভোট দেশে-বিদেশে বিশ্বাসযোগ্য হবে’


বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল
বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল

বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আশা প্রকাশ করেছেন যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্য হবে।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত মিট প্রেস দ্য অনুষ্ঠানে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “বিশ্বাসযোগ্যতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। তবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টা করবো। আমরা আশাবাদী যে, নির্বাচন দেশে-বিদেশে বিশ্বাসযোগ্য হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, একটি বড় রাজনৈতিক গোষ্ঠী ভোটের বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার চালাচ্ছে। ফলে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজন করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে নির্বাচন কমিশন।

তিনি বলেন, “সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে; এরই মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। একটি বড় রাজনৈতিক দল আরো কয়েকটি দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন বিরোধী জোরালো প্রচারণা চালাচ্ছে।”

“বিরোধী দলের প্রতিরোধের মধ্যেও জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে;” উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

তিনি জানান, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সংকট দেখা দিতে পারে। বলেন, “কারণ একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বর্জন করছে এবং প্রকাশ্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে। আমরা এই বাস্তবতা অস্বীকার করি না।”

নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি জানান, বিরোধিতা ও প্রতিরোধ সত্ত্বেও, জনগণ ও ভোটারদের অংশগ্রহণে এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা সম্ভব হবে।

হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে শান্তিপূর্ণ প্রচারণা চালানোর আহবান জানান।

তিনি বলেন, “আপনারা ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে জনমত গঠনের জন্য নির্বাচনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাতে পারেন।”

সিইসি আরো বলেন, “ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়ে শারীরিকভাবে নির্বাচন প্রতিহত করলে তা অপরাধ হবে।”

তিনি আরো বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচন প্রতিহত করতে অগ্নিসংযোগ ও শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে, তাহলে কমিশনকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায়, অনেক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ এই ভোট আয়োজনকে সঠিক নির্বাচন মনে করছেন না; এ বিষয়ে সি্িসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

জবাবে সিইসি জানান, কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে জড়ানো ইসির কাজ নয়। ইসির কাজ শুধু নির্বাচন পরিচালনা করা।

তিনি বলেন, “এই বিতর্ক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে থাকবে এবং রাজনীতিবিদরাই একদিন এর সমাধান করতে পারেন।”

হাবিবুল আউয়াল এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট রাখার জন্য প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সম্ভাব্য ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন এখন ভোটার উপস্থিতির হার অনুমান করাকঠিন।

তিনি আরো বলেন, “ভোটার উপস্থিতি যদি এক শতাংশের কম হয়, তবুও এটি আইনগতভাবে সঠিক হবে, যদিও কেউ কেউ এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।”

সিইসি বলেন, ভোটারদের উৎসাহিত করা ইসির একটি ছোট দায়িত্ব। প্রার্থীদের উৎসাহে ভোটাররা সর্বদা কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি এটি একটি ছোট খাটো দায়িত্ব।”

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান যে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে নির্বাচন আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হতো। তিনি বলেন, “আর এটা একটা সত্যি।

মিট প্রেস দ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন; চার নির্বাচন কমিশনার, পররাষ্ট্র সচিব ও ইসি সচিব।

‘নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন’

স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে, জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া টেলিভিশন ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাতায়াতের সুবিধার্থে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, ট্যাক্সিক্যাব, ট্রাক ছাড়া অন্য সব যানবাহন চলাচল করবে।

কোনো রকম বাধার সম্মুখীন হলে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারকে জানানোর অনুরোধ করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “প্রিসাইডিং অফিসার যে কোনো মূল্যে যে কোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করে ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইনগতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং বাধ্য।”

প্রিজাইডিং অফিসারকে সহায়তা করতে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট নিকটেই অবস্থান করবেন; জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল ও ফলপ্রসূ করতে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও জনগণের অংশগ্রহণ ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “২২ মাস আগে আমরা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করে নির্বাচনে অনাগ্রহী নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমন্ত্রণে তারা সাড়া দেননি। এরপর নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছি।”

নির্ধারিত সময়ে ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন আয়োজনে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ায় সবার সমন্বিত সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়ে থাকে।

“নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক ও পদ্ধতিগত প্রশ্নে মত-বিরোধের কারণে এবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না” উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

XS
SM
MD
LG