অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ নির্বাচন: সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা জাতীয় পার্টির চার প্রার্থীর


সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের প্রার্থী সোহরাব হোসেন ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের প্রার্থী রবিউল ইসলাম। ৩ জানুয়ারি, ২০২৪।
সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের প্রার্থী সোহরাব হোসেন ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের প্রার্থী রবিউল ইসলাম। ৩ জানুয়ারি, ২০২৪।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চার প্রার্থী। এই চার প্রার্থীর দুজন চুয়াডাঙ্গার দুটি আসন থেকে, একজন সিলেটের একটি আসন থেকে এবং আরেকজন গাইবান্ধার একটি আসন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার দুই আস থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দুই প্রার্থীর

দলীয় সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগ তুলে চুয়াডাঙ্গার দুই আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) দুই প্রার্থী।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের প্রার্থী সোহরাব হোসেন ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের প্রার্থী রবিউল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন। যদিও দুদিন আগে মৌখিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা সাংবাদিকদের জানান দুই প্রার্থী।

দলীয় সিদ্ধান্তহীনতাকে দায়ী করে প্রার্থীরা জানান, দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছেন। সেই সঙ্গে তারা প্রার্থীদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন ও যোগাযোগ রাখছেন না।

দলের শীর্ষ এই দুই নেতা এই বার বার প্রার্থীদের বিপদে ফেলে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এসব কারণে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তারা বলেন, দলের হাইকমান্ড ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ভোটারদের কাছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের হেয় ও নিন্দিত করছেন।

একই সঙ্গে অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহযোগিতার কারণে বাধ্য হয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বলে জানান দুই প্রার্থী।

রবিউল ইসলাম বলেন, এবারের ভোট কেমন হচ্ছে, তা তো জানছেন। আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান আর মহাসচিব আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেন না। কেবল মনোনয়ন দিয়েই ছেড়ে দিয়েছেন। দল থেকে কোনো নির্বাচনের একটি টাকাও দেয়নি। আমি ২০০১ সাল থেকে নির্বাচন করছি। আমি বলতে পারি, আমি দলকে টাকা দিয়েছি, দল আমাকে টাকা দেয়নি।

তিনি বলেন, ২৬ জনকে নিয়েই ব্যস্ত নেতারা। আর আমরা ২৫৭ জন পড়েছি মহাবিপদে। এবারের ভোট অন্য রকম। টাকা ছাড়া কেউ কথা বলছে না। দৈনিক কোটি কোটি টাকা ওড়াচ্ছে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সেখানে আমার যতটুকু ছিল খরচ করেছি। এখন আর পারছি না। তাই সরে দাঁড়ালাম।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সোহরাব হোসেন বলেন, জাতীয় পার্টির ভোটারদের কোনো বিধি নিষেধ নেই। তারা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। জাপার প্রার্থীদের ভোট বর্জনের ঘটনা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

সিলেট-৫ আসন: সরে দাঁড়ালেন জাপার প্রার্থী সাব্বির

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ না থাকায় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাব্বির আহমদ।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিকালে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা দেন তিনি।

সাব্বির আহমদ বলেন, সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিলেটে এসেও একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমরা মাঠে সেরকম কোনো পরিবেশ পাচ্ছি না। তাই নির্বাচন করা খুবই কঠিন।

তিনি আরও বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিলেট সার্কিট হাউজে সব প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেসময় আমরা বিভিন্ন অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বিষয়টি নোট করেছেন। এ অভিযোগ দেওয়ার পর নির্বাচনের পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন করার কোনো পরিবেশ নেই। তাই নির্বাচন বর্জন করেছি।

সাব্বির আহমদ বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি বলেছেন তোমার এলাকার পরিবেশ তুমি বোঝ। যদি সেরকম পরিবেশ না থাকে তাহলে বর্জন কর।

গাইবান্ধায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাপার প্রার্থী

জাতীয় পাটির (জাপা) কেন্দ্রীয় নেতা ও দলীয় প্রার্থী আতাউর রহমান সরকার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিকালে গাইবান্ধার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

আতাউর জানান, সমর্থকদের মারধর, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও চিহ্নিত মহলের হুমকি এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পাটি থেকে আতাউর রহমান সরকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

নিয়মানুযায়ী তিনি নির্বাচনী প্রচার চালাতে থাকেন। আর মাত্র তিন দিন পর নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে তিনি পাড়া মহল্লায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যান।

কিন্ত ইদানিং তার নির্বাচনী অফিসে হামলা, ভাঙচুর, নেতা-কর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ জীবন নাশের হুমকিও দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এসব কারণে তিনি তার জীবনে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। তার জীবন রক্ষার তাগিদে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কোনো মামলা দায়ের করেননি। সময় হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

XS
SM
MD
LG