বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে, জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে ৩২টি আসন ভাগাভাগি করেছে।
এই ৩২ আসনের মধ্যে ২৬টি আসন জাপার জন্য এবং বাকি ছয় আসন ১৪ দলীয় জোটের তিন শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এ কথা জানান। ৩২টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহারের বিষয়টি জানাতে ইসিতে এসেছিলেন তিনি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে তিনটি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে দুটি এবং জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) সঙ্গে একটি আসন ভাগাভাগি করছে আওয়ামী লীগ।
রবিবার আওয়ামী লীগ ৩০ টি আসন থেকে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। আর ৩২টি আসনের মধ্যে দুটি আসনে আগে থেকেই কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ।
জাপার জন্য ছেড়ে দেয়া ২৬টি আসন হলো; ঠাকুরগাঁও- ৩, নীলফামারী- ৩ ও ৪, রংপুর- ১ ও ৩, কুড়িগ্রাম- ১ ও ২, গাইবান্ধা- ১ ও ২, বগুড়া- ২ ও ৩, সাতক্ষীরা-২, পটুয়াখালী- ১, বরিশাল- ৩, পিরোজপুর- ৩, ময়মনসিংহ- ৫ ও ৮, কিশোরগঞ্জ- ৩, মানিকগঞ্জ- ১, ঢাকা- ১৮, হবিগঞ্জ- ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২, ফেনী- ৩, চট্টগ্রাম- ৫ ও ৮ এবং নারায়ণগঞ্জ- ৫।
এছাড়া, ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা ছয়টি আসন হলো বগুড়া-৪, রাজশাহী-২, কুষ্টিয়া-২, বরিশাল-২, পিরোজপুর-২ ও লক্ষ্মীপুর-৪।
আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া ২৬ আসনে জাপা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, নীলফামারী-৩ আসনে রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আসনে আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ আসনে হোসেন মুকবুল শাহরিয়ার, রংপুর-৩ আসনে গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের), কুড়িগ্রাম-১ আসনে একেএম মুস্তাফিজুর রহমান।
জাপার অন্য প্রার্থীরা হলেন; কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ আসনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-১ আসনে আবদুর রশিদ সরকার, বগুড়া-২ আসনে শরীফুল ইসলাম জেন্নাহ, বগুড়া-৩ আসনে মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, সাতক্ষীরা-২ আসনে মো. আশরাফুজ্জামান, পটুয়াখালী-১ আসনে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, বরিশাল-৩ আসনে গোলাম কিবরিয়া টিপু, পিরোজপুর-৩ আসনে মো. মাসরেকুল আজম রবি, ময়মনসিংহ-৫ আসনে সালাহউদ্দিন আহমেদ (মুক্তি), ময়মনসিংহ-৮ আসনে ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে মো. মুজিবুল হক (চুন্নু)।
এছাড়াও রয়েছেন; মানিকগঞ্জ-১ আসনে জহিরুল আলম রুবেল, ঢাকা-১ আসনে শরিফা কাদের, হবিগঞ্জ-১ আসনে মো. আবদুল মোনেম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মো. আবদুল হামিদ, ফেনী-৩ আসনে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে মো. সোলায়মান আলম শেঠ এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমান।
জাসদের তিন প্রার্থী হলেন; বগুড়া-৪ আসনে একেএম রেজাউল করিম তানসেন, কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনু এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশাররফ হোসেন।
এছাড়া, বরিশাল-২ আসনে রাশেদ খান মেনন ও রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশা এবং পিরোজপুর-২ আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) আনোয়ার হোসেন (মঞ্জু) এর অনুকূলে আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে, শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কোনো শরিকের জয়ের নিশ্চয়তা দেবে না।
ওই দিন ওবায়দুল কাদের আরো বলেছিলেন, জোটের জন্য সাতটির বেশি আসন ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই। আর, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের পূর্ণ প্রচেষ্টা চালাবেন।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সঙ্গে নির্বাচনী জোট না করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছিলেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ অনুরোধ করেন। তখন তিনি অভিযোগ করেন, জিএম কাদের অবৈধভাবে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দখল করেছেন। সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সুকৌশলে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।
রওশন আরো বলেছেন, “খণ্ডিত জাতীয় পার্টি ও গোলাম কাদেরের সঙ্গে কোনো নির্বাচনী জোট না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি।”
গত ১৫ ডিসেম্বর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেছেন, জনসমর্থন না থাকায় সরকার আসন ভাগাভাগির একতরফা নির্বাচন করছে।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় না কেন? কারণ, তাদের জনসমর্থন নেই। তারা ১৫ বছর ধরে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে; এখন একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করছে।”
মাহবুবউদ্দিন খোকন উল্লেখ করেন, "আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল এতটা দেউলিয়া হয়েছে যে, আসন ভাগাভাগির মতো নির্বাচনের নীলনকশা নিয়ে তাদের এগিয়ে যেতে হচ্ছে।"