জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বাস্তুচ্যুতি’র কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) কাউন্সিলের ১১৪তম অধিবেশনে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, “বেশিরভাগ জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি ঘটে কিছু ভয়াবহ পরিস্থিতিতে; যা জাতীয় সীমানার মধ্যে এবং সীমানা পেরিয়েও ঘটে।” তিনি বলেন, “ আশঙ্কা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এর মধ্যে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় থাকবে চার কোটি। আর, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে।”
শেখ হাসিনা সতর্ক করেন, “সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা’র অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা এবং মারাত্মক সাইক্লোন বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুতি’র কারণ, আর এগুলো, বাস্তুচ্যুতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এ ধরনের বাস্তুচ্যুতি আমাদের ধারণার চেয়ে দ্রুত গতিতে ঘটছে।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বা আটকা পড়েছেন; তাদের মৌলিক সেবা, সামাজিক সুরক্ষা এবং জীবিকা নির্বাহের সুযোগ থাকতে হবে। তাদের আতিথ্যদানকারী সম্প্রদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাবগুলোও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা দরকার।”
শেখ হাসিনা বলেন, “মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে আশ্রয় দেয়ার বোঝা বহন করছে বাংলাদেশ।” তিনি উল্লেখ করেন, “এর মধ্যে কিছু লোক পুরো অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে মানবপাচার চক্রের শিকার হচ্ছে। এই ধরনের মিশ্র অভিবাসন প্রবাহ জলবায়ু গতিশীলতার বিষয়টি আরো সমস্যাগ্রস্ত করে তোলে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “মানুষের চলাচলের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আন্তর্জাতিক আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য দিতে হবে।” এ সমস্যার কার্যকর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে আইওএম ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আশ্বস্ত যে অনেক ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়নশীল দেশও এ বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা আনন্দিত যে, কপ-২৮, জিএফএমডি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সরকার তার সীমিত সম্পদের মধ্যে জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছে।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় , ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে নিরাপদ বাসস্থান দিতে কক্সবাজারে ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আর, আমাদের জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প, বিশ্বের সর্ববৃহৎ উদ্যোগ হিসেবে, স্থানীয় মাছ শিকার, পর্যটন ও বায়ু শক্তি কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পাঁচটি পরামর্শ দেন। এগুলো হলো; নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত অভিবাসন সম্পর্কিত গ্লোবাল কমপ্যাক্ট-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, মানবাধিকার-ভিত্তিক পদ্ধতিতে মানব গতিশীলতার জলবায়ুর-প্রভাব মোকাবেলা।
জলবায়ু অভিবাসীদের পরিস্থিতি, জলবায়ু ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা। যাতে, তারা যে ক্ষতি ও ধ্বংসের সম্মুখীন হয়, তার প্রেক্ষাপট-নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করা যায়। অভিবাসনকে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল হিসাবে দেখার জন্য, অবশ্যই স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রস্তুত থাকা।
জলবায়ু অভিবাসী; বিশেষ করে নারী, শিশু এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মান পুনর্গঠনের জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মানগুলো পর্যালোচনা করা।
আর, সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি বস্তুনিষ্ঠ মামলা প্রস্তুত করতে, মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সু-গবেষণা করা, ডেটা এবং প্রমাণে বিনিয়োগ করা।