বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে রবিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে। এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত। এটা বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ডাকা ৭ম দফা অবরোধ কর্মসূচি।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করতে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে ইতোমধ্যে ৬ দফায় অবরোধ পালন করেছে বিএনপি। আগের অবরোধ কর্মসূচিগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার আশঙ্কায় এবারও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগরের সড়কে রিকশার সংখ্যা বেশি; কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।গণমাধ্যমের যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ বহনকারী যানবাহন এ অবরোধের আওতাবহির্ভূত রয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
সারা দেশে ২৩০ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ৪৩০ টহল দল মোতায়েন
বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়, সারা দেশে ২৩০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার (২৬ নভেম্বর) বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অবরোধের প্রথম দিনে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ২৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। শরিফুল ইসলাম আরো জানান, বাকি ২০২ প্লাটুন বিজিবি অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, ঢাকায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১৪৫টি টহল দল কাজ করছে। সব মিলিয়ে সরা দেশে র্যাবের ৪৩০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমরান খান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে র্যাব।
২৮ অক্টোবর থেকে ২০৮টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে রবিবার (২৬ নভেম্বর) ৬টা পর্যন্ত. বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচিতে মোট ২০৮টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়া, ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রবিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর চলমান ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ চলাকালে গত ৬০ ঘণ্টায় তিনটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
এ সময় মোট তিনটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকা শহরের ভেতরে একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার। তিনি আরো জানান যে বাকি দুটি অগ্নিসংযোগ হয়েছে কুমিল্লার দাউদকান্দি ও বরিশাল বিভাগে। আগুনে দুটি বাস ও একটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে, সারাদেশে আগুন নেভাতে ছয়টি অগ্নিনির্বাপক ইউনিটের ৩০ জন সদস্য কাজ করেছেন বলে জানান শাহজাহান শিকদার।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।