বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে, চীবর উৎসর্গের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে কঠিন চীবর দানোৎসব। শান্তি ও মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার প্রাঙ্গণে লাখো পূণ্যার্থী সমবেত হন। প্রয়াত ধর্মগুরু বনভান্তের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে, ২৪ ঘণ্টায় প্রস্তুতকৃত চীবর দান করা হয়। রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের হাতে এসব চীবর উৎসর্গ করেন রাঙ্গামাটি সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায়।
চীবর উৎসর্গের সময়, ভক্তদের সাধু-সাধু ধ্বনিতে রাজবন বিহার এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। এর আগে, রাজবন বিহার প্রাঙ্গণে আসা পূণ্যার্থীদের সামনে, মহাপরিনির্বাণপ্রাপ্ত শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের অমৃত কথার অডিও উপস্থাপন করা হয়।
পরে, দায়ক দায়িকার উদ্দেশে স্বধর্ম দেশনা দেন রাজবন বিহারের ভিক্ষু সংঘের প্রধান, শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এ সময় তিনি কৌশল কর্ম, সৎ চেতনা ও জীবনযাপন করার জন্য হিতোপোদেশ দেন।
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। প্রাচীন নিয়ম মতে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরি করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান।
এর ধারাবাহিকতায়, বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বিকালে, বেইন ঘর উদ্বোধন ও চরকায় সুতা কাটার মধ্যদিয়ে রাজবন বিহারে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী ৪৮তম কঠিন চীবর দানোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। রাতভর তুলা থেকে চরকায় সুতা কেটে, সুতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে চীবর বুননের কাজ। দুপুরে, ভিক্ষু সংঘকে সেই চীবর (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান করার মধ্য দিয়ে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান, রাজবন বিহারে চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়।
রাজবন বিহার উপাসক পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, “বৌদ্ধদের যত ধরনের দান রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পূণ্যের দান হলো কঠিন চীবর দান। এ জন্য কঠিন চীবর দানোৎসবকে দানোত্তম চীবর দান উৎসব বলা হয়ে থাকে।”
তিনি আরো বলেন, “এ বছর রাজবন বিহারে প্রায় ২০০ বেইন ও দেড় শতাধিক চরকার সাহায্যে ৬ শতাধিক দায়ক-দায়িকা চীবর বুননের কাজে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া এ বছর ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে ৭৬ জনসহ আমেরিকা, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা থেকে বহু পূণ্যার্থী রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ৪৮তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।”
রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সহসভাপতি নিরুপা দেওয়ান বলেন, “পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তর এই ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় প্রাচীন নিয়মে। জগতে যত প্রকার দান রয়েছে, তার মধ্যে চীবর দানই হচ্ছে সর্বোত্তম দান। এতে পূর্ণতা লাভ করা যায়।”
কঠিন চীবর দান উৎসবকে কেন্দ্র করে সব সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিণত হয় রাজবন বিহার।