অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাড়ছে কোল্ড ডায়রিয়া, স্যালাইন সংকটে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল


বাড়ছে কোল্ড ডায়রিয়া, স্যালাইন সংকটে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল
বাড়ছে কোল্ড ডায়রিয়া, স্যালাইন সংকটে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল

বাংলাদেশের ফরিদপুর অঞ্চলে গত ১২ দিন ধরে বাড়ছে ডায়রিয়ার (কোল্ড ডায়রিয়ার) রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে আইভি স্যালাইনের (শিরায় দেয়া) সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১০০ শয্যার ফরিদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে ১০টি শয্যা। শীতের আসতে না আসতেই, অনেক শিশু এবং বৃদ্ধ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা চিকিৎসা নিতে আসছেন এই হাসপাতালে। আর, এমন স্বল্প পরিসরে (১০ শয্রার), সীমিত সংখ্যক জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখানে, প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছেন ৫০ জন রোগী।

গত ১২ দিনে প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৬০০ রোগী। এই রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ওয়ার্ডের মেঝেতে ও ওয়ার্ডের বাইরে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) ১০ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেখা যায়, ৫৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। অনেক রোগীকে রাখা হয়েছে ওয়ার্ডের মেঝে-তে ও বারান্দার ফ্লোরে। আর শিশুদের রাখা হয়েছে একই বেডে দুইজন বা তিনজন করে।

এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে স্যালাইন সংকট। বাজারের ওষুধের দোকানেও মিলছে না কলেরার জন্য প্রযোজ্য স্যালাইন। যা পাওয়া যাচ্ছে, তাও কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে বেশি দাম দিয়েও স্যালাইন পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন রোগীর স্বজনরা।

সরকারি হাসপাতালে স্যালাইন না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগী ও স্বজনরা। তারা বলছেন, বাজার থেকে টাকা দিয়েও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। অথবা দাম গুণতে হচ্ছে তিনগুণ। এতে রোগীদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ফরিদপুর শহরের শোভারামপুর এলাকার আব্দুল জলিলের পরিবারের সদস্যরা। প্রথমে জলিলের স্ত্রী কলেরায় আক্রান্ত হন। এরপর জলিলের ছেলের বউ। শয্যা না পেয়ে, বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।

শয্যা ও কলেরা রোগীর স্যালাইন সংকটের কথা স্বীকার করেছেন ফরিদপুর সদর জেনারেল হাপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার গনেশ কুমার আগরওয়ালা। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা রোগীদের সচেনতার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে রোগীর চাপ অনেক বেশি। সেই বিবেচনায় কলেরার স্যালাইন সংকট প্রকট।

তিনি আরো বলেন, “রোগীর চাপ যদি স্বাভাবিক না হয়; আর সময় মতো স্যালাইন না পাই তাহলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে।”

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ৭ হাজার ব্যাগ কলেরা স্যালাইনের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়; এর বিপরীতে এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে ১ হাজার ২০০ ব্যাগ। সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ডায়রিয়া রোগী বেড়ে গেলে, ১৬ নভেম্বর স্যালাইন চাওয়া হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। সংকট নিরসনে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ধার করে ৫০০ স্যালাইন আনা হয়েছে।

ফরিদপুর জেলার সিভিল সার্জন সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, “স্যালাইন সংকট সাময়িক। যেহেতু সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর হার অনেক বেশি, তাই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডেঙ্গু রোগীদের জন্য স্যালাইন প্রস্তুত করছে বেশি। আমরা আমাদের চাহিদা পত্র সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই চাহিদা অনুপাতে স্যালাইন পাবো।”

তিনি আরো জানান, শীতের প্রাক্কালে, দিনে গরম রাতে ঠান্ডা; তাপমাত্রার এই ভারসাম্যহীনতার কারণে কোল্ড ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। আমাদের শিশু ও বয়স্কদের এক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। তবেই আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো।”

XS
SM
MD
LG