গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্রুত ও নির্বিঘ্নে মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য যৌথভাবে আহ্বান জানানোর জন্য জি-২০ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে এ আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি মাসে ভারতের সভাপতিত্ব শেষ করার আগে দিল্লি ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য ভার্চুয়ালি জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত জি-২০ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ফোরাম।
ফোরামে স্পেনকে স্থায়ী অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ করে ভারত।
শেখ হাসিনা বলেন, দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব ফিলিস্তিনে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এবং ১০ হাজারেরও বেশি নিরীহ শিশুকে নির্মমভাবে গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছে।
তিনি বলেন, “এই সব দানবীয় কর্মকাণ্ড বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে, বৈশ্বিক দুর্দশাকে তীব্রতর করেছে এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ধীর করে দিয়েছে।”
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ইউরোপের বর্তমান যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে এবং এটি অব্যাহত রয়েছে ।
তিনি বলেন, “আজকের বিশ্বায়নের যুগে মানুষের জীবন ও মানবতা রক্ষার জন্য সব যুদ্ধ ও সংঘাতকে দৃঢ়ভাবে 'না' বলা সহজ হবে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, একটি ভালো শুরু হতে পারে সুপ্রতিবেশী সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং বিশ্বজুড়ে এটির প্রসার ঘটানো।
শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারতের চমৎকার সম্পর্কের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরে আমি আনন্দিত।”
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারত তাদের সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত দিয়ে সেটি প্রমাণ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, “আমাদের বৈশ্বিক পরিবারের সবার কল্যাণ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চেতনায় বাংলাদেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি নাগরিককে (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে আমি আপনাদের আন্তরিক সমর্থন কামনা করছি।”
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন যে, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে দেশগুলো যেসব অঙ্গীকার করেছে তা ফলপ্রসূ হবে এবং তা বাস্তবায়িত হবে এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপে রূপান্তরিত হবে।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যত’ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত স্থান, পৃথিবী গ্রহের যত্ন নিতে, সুরক্ষিত করতে এবং গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর উন্নয়ন চাহিদা, বিশেষ করে জলবায়ু পদক্ষেপ, প্রযুক্তিগত রূপান্তর, ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন সম্পর্কিত দেশগুলোর উন্নয়ন চাহিদা পূরণে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে নয়াদিল্লিতে নেতারা একমত হওয়ায় তিনি আনন্দিত।
সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ১৮তম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সব সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত দিল্লি ঘোষণা বাস্তবায়নে উৎসাহিত করাই এই বৈঠকের লক্ষ্য।
১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ভারত একটি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে।
আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ জি-২০ দেশগুলোর নেতারা, ৯টি অতিথি দেশ এবং ১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
১ ডিসেম্বর ভারত জি-২০-এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে।
ভারত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জি-২০ সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে। ২০২৪ সালে ব্রাজিলের জি-২০ সম্মেলনে ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে জি-২০ ত্রয়িকা গঠিত হবে।
ডিসেম্বরে ব্রাজিল যখন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে, তখন নতুন ত্রয়িকা গঠন করা হবে। যেখানে ভারতের সভাপতির মেয়াদ শেষ হবে, দায়িত্ব নেবে ব্রাজিল এবং এর পরের মেয়াদে সভাপতি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
জি-২০ সদস্যরা বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।