উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি। ঝড়েরর প্রভাব কেটে যাওয়ার পর বন্দরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অভ্যন্তরীর রুটে স্বাভাবিক হয়েছে নৌযান চলাচল। তবে বাগেরহাট জেলার দুবলার চরে শুটকি মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এখনো নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ২৫ জেলে। ঝড়ের কারণে দুদিনে প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ৬ জনের।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চালু
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাব কেটে যাওয়ার পর, শুক্রবার(১৭ নভেম্বর) রাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আবার চালু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে বন্দর জেটিতে ৫টি জাহাজ ভিড়েছে এবং এসব জাহাজ থেকে মালামাল খালাস শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) হাবিবুর রহমান জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্তকতা জারির পর বন্দরে শিপ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং, ডেলিভারি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে, তা স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এর আগে, শুক্রবার দুপুরে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলির’ সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাতে চট্টগ্রাম বন্দরে দ্বিতীয় সবোর্চ্চ সতর্কবস্থা জারি করা হয়েছিলো।
চট্টগ্রামে শিশুসহ নিহত ২
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে দমকা হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাই উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকালে এসব ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন; সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী আব্দুল ওহাব এবং মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাপাহাড় এলাকার আনোয়ার হোসেনের ৩ বছর বয়সী মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খিসা বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা সন্দ্বীপে প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায়, গাছের ডাল ভেঙে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।” এদিকে, মীরসরাই উপজেলায় নিহত শিশু মুনতাহার চাচা মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, সবার অগোচরে শুক্রবার বিকালে বাড়ির সামনে গেলে একটি গাছের ডাল ভেঙে পড়লে তার মুত্যু হয়।
এখনো নিখোঁজ ২৫ জেলে
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র কবলে পড়ে দুবলার চরের দু’টি ট্রলারসহ ২৫ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।শনিবারও (১৮ নভেম্বর) নিখোঁজ জেলেদের সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ দুই ট্রলারের ২৫ জেলের বাড়ি চট্টগ্রামে।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবির আরেকটি ঘটনায় নিখোঁজ হওয়া ১৪ জেলেকে ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করেছে দুবলার চরের জেলেরা। শনিবার সকালে উদ্ধার করা জেলেদের বাগেরহাটের সুন্দরবনের আলোরকোলে আনা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ১৪ জেলের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় বলে জানা গেছে।
দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন আহম্মেদ জানান, “ঝড়ের কবলে পড়ে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বঙ্গোপসাগরে ১৪ জন জেলেসহ একটি ট্রলার ডুবে যায়। দুবলার চরের জেলে বহরদ্দারদের একটি ট্রলার ফেরার পথে ভেসে থাকা জেলেদের উদ্ধার করে।”
কামাল উদ্দীন আহম্মেদ আরো জানান, “দুবলার চরে জেলে বহরদ্দারদের দু’টি ট্রলারসহ ২৫ জেলে শুক্রবার থেকে নিখোঁজ রয়েছে। এখনো তাদের সন্ধান মেলেনি।”
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার খলিলুর রহমান জানান, “বঙ্গোপসাগারে ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ হওয়া ১৪ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। জেলেদেরকে তাদের বাড়িতে পাঠানোর জন্য জেলে সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।”
নষ্ট হয়েছে মাছ
ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে বাগেরহাটের সুন্দরবনের দুবলার চরে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের মাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পচে যাওয়া শুঁটকি মাছ থেকে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এসব মাছ সাগরে ফেলে দিতে হবে বলে জানান দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন আহম্মেদ।
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি শুক্রবার দুপুরে খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলা-পায়রা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এর প্রভাবে আগের বুধবার সন্ধ্যা থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের বিভিন্ন চড়ে বৃষ্টি ঝরতে থাকে।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব এলাকায় ভারী বর্ষণ হয়। ঝড়ো বাতাস এবং বৃষ্টিপাতের কারণে সুন্দরবনের শেলার চর, নারিকেলবাড়িয়া, মাঝেরকেল্লা ও আলোরকোলে শুঁটকির জন্য শুকানো এবং কাচা অবস্থায় প্রায় ৬০ হাজার কুইন্টাল মাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে দুবলার চরে শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের কী পরিমাণ ক্ষক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করার জন্য সেখানে দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের স্টাফদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
লঞ্চ চলাচল শুরু
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাব কেটে যাওয়ার পর, শনিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে, টানা ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর, অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লা রুটের লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিপদ সংকেত না থাকায় শনিবার সকাল ৭টা থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লা রুটের লঞ্চ চলাচল।