অর্থনীতির স্বার্থে সহিংসতা পরিহার করতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) গুলশান কার্যালয়ে বিরাজমান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতা, অর্থনীতিবিদ এবং এফবিসিসিআই এর সাবেক নেতাদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মতবিনিময় সভায় চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, বিলাসী পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং এলসি জটিলতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “বিগত কয়েক বছর যাবৎ দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে; যা ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য জরুরি। সম্প্রতি, রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ডের ফলে, দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। একই সঙ্গে, তৈরি পোশাক খাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।”
এফবিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, “বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের সাপ্লাই চেইনকে ভীষণভাবে বিঘ্নিত করছে। যার প্রভাব পণ্যের উৎপাদন, বাজার মূল্য এবং রপ্তানি ও সেবা খাতের ওপর পড়ছে।” এমন পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরণের সহিংস কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
ডলার সংকট সমাধান এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারাদেশের সকল চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়ী সংহতি সমাবেশ আয়োজনের জন্য এফবিসিসিআইকে পরামর্শ দেন।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অর্থনীতির এই সংকটের মুহূর্তে রাজনৈতিক সহিংস কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের বির্তকিত মন্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া, বিদ্যমান সহিংস কর্মসূচির বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেয়ার জন্য এফবিসিসিআইকে আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “ডলারের ওপর চাপ কমাতে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরো সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে আগামী ৬ মাস থেকে এক বছর অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানির হার আরো কমিয়ে আনতে হবে।” অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কাট-ছাটের কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো নিজ কারখানায় আগুন দিতে পারে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন; সাবেক মূখ্য সচিব ও এফবিসিসিআই এর প্যানেল উপদেষ্টা মো. আব্দুল করিম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও প্যানেল উপদেষ্টা খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই এর প্যানেল উপদেষ্টা ড. মাসরুর রিয়াজ, আব্দুল মুক্তাদির, এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, বিকেএমইএ’র এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ,বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম।