অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলন জোরদার করার পরিকল্পনা বিএনপির


জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চলমান আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা জানিয়েছেন বিএনপির কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চলমান আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা জানিয়েছেন বিএনপির কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে সহিংসতার পর, দলটির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা দৃশ্যত আত্মগোপনে চলে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চলমান আন্দোলন জোরদার করার ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা।

বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ইউএনবিকে জানান, একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে তারা ইতোমধ্যে হরতাল, অবরোধ এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও বিভিন্ন সরকারি অফিস ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়েছেন। এখন একটা বিরতিহীন আন্দোলনের কৌশল তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।

বিএনপি নেতারা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে কী করতে হবে, সে বিষয়ে তাদের দল সমমনা দলগুলোর মতামত নিয়েছে। অধিকাংশ দল কোনো বিরতি ছাড়া অবরোধ বা হরতাল কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছে।

তাদের কৌশল অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপর, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) একটি নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে এবং তফসিল বাতিল করতে, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া হবে। এ কথা জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। ইসি যদি তাদের আল্টিমেটামে কর্ণপাত না করে, তাহলে বিএনপি তাদের কর্মসূচি নিয়ে সারাদেশে রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করবে বলেও জানান তারা।

সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনকে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। বিএনপি নেতারা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসি কীভাবে সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তা তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।

বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ এবং গ্রেপ্তার হওয়া সিনিয়র নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে ইসির ভূমিকাও পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি; জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ এবং পরবর্তী হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১০ হাজার ৭৭০ বিরোধী নেতা ও সমর্থক-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান খোকনকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান এখন রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। তবে, গ্রেপ্তার এড়াতে তারা এখন নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন। আর, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য বিদেশে অবস্থান করছেন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক সহ অন্যান্য সক্রিয় সদস্য এখন গোপন স্থান থেকে আন্দোলন পরিচালনা করছেন। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আন্দোলন জোরদার করতে, দলের কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই আমরা রাজপথে আসবো।”

তিনি বলেন, “জেলা পর্যায়ে মহাসড়ক ও সড়কে পিকেটিং বাড়ানোর মাধ্যমে অবরোধ কর্মসূচি আরো কার্যকর করে, ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে আমাদের দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই, তফসিল ঘোষণার পর আমাদের নেতা-কর্মীরা রাজপথে আন্দোলনে নামবেন।”

তিনি আরো বলেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব রাষ্ট্রযন্ত্র কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকলে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এছাড়া, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন উঠবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, “সরকার মনে করতে পারে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু এটা হবে না। তফসিল ঘোষণার পর, নির্বাচন বাতিলের উদাহরণ আমরা দেখেছি। বিএনপি রাজপথে থেকে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। জনগণ এবার সরকারকে নির্বাচনের নামে নাটক করতে দেবে না।”

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপির আন্দোলন এবার ব্যর্থ হবে না। তফসিল ঘোষণা হলে, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না। আমরা তুমুল গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি পূরণে বাধ্য করবো।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, তাদের দল কোনো অবস্থাতেই আন্দোলন থেকে পিছপা হবে না। তিনি বলেন, “বিরোধী দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে, একতরফা তফসিল ঘোষণা করা হলে, তা প্রমাণ করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তরিক নয়।”

XS
SM
MD
LG