গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের মধ্যে বুধবার (৮ নভেম্বর) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “দল যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করবে, আমাদের নেতা-কর্মীরা তা পালন করবে। আমাদের গন্তব্য হয় জেলখানা অথবা মহাসড়ক। এই দুইয়ের মাঝখানে কিছুই নেই”।
তিনি আরও বলেন, “তারা আমাদের জেলে নিয়ে যেতে পারে, নানাভাবে আঘাত করতে পারে, নির্যাতন করতে পারে, কিন্তু আমরা সবকিছু মেনে নেব এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে”।
ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সদস্য সচিব আল-আমিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোশাকের সদস্যরা তুলে নিয়েছে উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমাদের একজন ছাত্রনেতা কোথায় আছেন বা কেমন আছেন তা আমরা জানি না। … আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিদিন এসব কাজ করছে”।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য সামগ্রিক নৈরাজ্যকর ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, কিন্তু সরকার ব্যর্থ হবে।
গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে উন্নত মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর পুলিশের হামলায় এক নারী শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রুহুল কবির রিজভী।
তিনি দাবি করেন, ২৪ ঘণ্টায় ৫১৫ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ১৮টি মামলায় ১ হাজার ৯২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৪৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ৫৭৯টি মামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এত নিপীড়ন, নির্যাতন ও নাশকতার মধ্যে দুই দিনের অবরোধের প্রথম দিন চলছে। এই কর্মসূচি সফল হয়েছে”।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সারা দেশে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। কারণ তারা যাত্রী পায়নি। তার মানে আমাদের কর্মসূচির প্রতি মানুষের সমর্থন রয়েছে”।
পাড়া-মহল্লায় আগুনসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন—তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আগুনসন্ত্রাস রোধে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সরকার তাদেরই গ্রেপ্তার করছে যারা আগুনসন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত, হুমুকদাতা-অর্থদাতা-নির্দেশদাতা আয়োজনকারী। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী মানুষকে হত্যা করেছে কিন্তু জীবন্ত পোড়ায়নি। এরা পাকিস্তানি বাহিনীর চেয়েও জঘন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যেমন পাড়ায়-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল, আজকে এদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে”।
বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে গণপ্রকৌশল দিবস ও ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
‘উন্নয়নের জন্য উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা নীতি’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইডিইবি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এ কে এম এ হামিদ সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান অনুষ্ঠানে ছিলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, “আগুনসন্ত্রাসীরা আসলে রাষ্ট্রের ওপর হামলা চালাচ্ছে। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটির প্রধান হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। তার বাড়িতে হামলার অর্থ বিচার বিভাগের ওপর হামলা। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন আওয়ামী লীগও না, বিএনপিও (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ) না। এখানে কেন হামলা চালাল এটি আমার বোধগম্য নয়”।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্ররা পরামর্শ দিতে পারে কিন্তু এমন পরামর্শ না, যেটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়। আমাদের সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো।
বিএনপির সঙ্গে বিদেশিদের সম্পর্ক নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “যারা সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজেই পালিয়ে যায় তাদের কেউ আর বাতাস দেবে না”।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের সেতু এবং মেগাপ্রকল্পগুলোসহ অবকাঠামোগত যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে, সেখানে যারা মাঠে কাজ করেন তারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় দফা সরকার গঠনের পর আজ পর্যন্ত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পাশে থেকেছে। দেশের উন্নয়নে অনন্য ভূমিকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই”।