অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

লালমনিরহাটে শশ্মানের মন্দিরে পূজা করতে বাধা: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিক্ষোভ


বাংলাদেশের বূড়া সাড়ডুবি এলাকায় একটি শশ্মানের মন্দিরে পূজা করতে বাধা দেয়ায় দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে। ৬ নভেম্বর, ২০২৩।
বাংলাদেশের বূড়া সাড়ডুবি এলাকায় একটি শশ্মানের মন্দিরে পূজা করতে বাধা দেয়ায় দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে। ৬ নভেম্বর, ২০২৩।

বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধায়, একটি শশ্মানের মন্দিরে পূজা করতে বাধা দেয়ায় দুই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানকে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সোমবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বূড়া সাড়ডুবি এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। পরে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

দুই চেয়ারম্যান হলেন; ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন ও গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৫ সালে এই শশ্মান স্থাপন করা হয়। হঠাৎ করে গত কয়েক মাস ধরে শশ্মানের জমি নিজেদের বলে দাবি করছেন রেজাউল হক, রেজাউনুল হক সুজন, মাইদুল হক মহল, মতিউর রহমান, সাজু ইসলাম, দুলাল এবং আরো কয়েক ব্যক্তি।

এ নিয়ে মন্দির কমিটির সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছে তাদের। গত শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে জমির দাবিদার ব্যক্তিরা শশ্মানের ঘর ও মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় ৩ নভেম্বর রাতে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩০/৪০ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন রতন চন্দ্র বর্মন।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। অভিযুক্তরা গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান শ্যামলের আত্মীয় হওয়ায়, হাতীবান্ধা থানার ওসি বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান। ইউপি চেয়ারম্যান শ্যামল ফকির পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান খোকনকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকালে শ্মশান এলাকায় গিয়ে চাপ দিয়ে আপসের চেষ্টা করেন।

এক পর্যায়ে, উত্তেজিত শ্যামল ও খোকন চেয়ারম্যান হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি দেন ও গালাগালি করেন। পরে, হিন্দু সম্প্রাদয়ের লোকজন তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গিয়ে দুই চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নিরু বালা বলেন, “প্রথমে রেজাউল হক, রেজাউনুল হক সুজন, মাইদুল হক মহল, মতিউর রহমান, সাজু ইসলাম, দুলালসহ কয়েকজন শ্মশানের মন্দির ভাঙচুর করে ও আগুন দেয়। এখন শ্যামল ও খোকন চেয়ারম্যান আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের পূজা-অর্চনা করতে বাধা দেয় তারা। আমরা এর বিচার চাই।”

এ বিষয়ে বুড়া সাড়ডুবি সার্বজনীন মহাশ্মশানের মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সবুজ বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যান শ্যামল ও খোকন মন্দিরে এসে পূজারিকে হুমকি দেয়। আমাদের পূজা-অর্চনার সামগ্রী গুঁড়িয়ে দেয়। আমরা ভয়ে পূজা-অর্চনা করতে পারছি না। আমরা ন্যায় বিচার চাই।”

এ বিষয়ে জানতে, গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন কার করা হলেও, তিনি কল রিসিভ করেননি। আর, ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন অবরুদ্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন,“আমরা মন্দিরের পূজায় বাধা দেইনি; সামান্য ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে।”

হাতীবান্ধা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার সিংহ জানান, “জমি নিয়ে ঝামেলা যদি থাকে, তা আইন অনুয়াযী সমাধান হবে। কিন্তু তারা কেন হিন্দু সম্প্রদায়কে গালিগালাজ করছে, তা বোধগম্য নয়। আর চেয়ারম্যানদের অবরুদ্ধ করে রাখাও ঠিক হয়নি।”

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, “লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে আমরা গিয়েছিলাম, ইউএনও অফিসে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হবে।” হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, “মন্দির কমিটিকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।”

XS
SM
MD
LG