বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল; ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য দলের সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে শনিবার (২৮ অক্টোবর)। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে, শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকায় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে ঢাকার মধ্যাঞ্চলে, যেখানে সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে চেকপোস্ট বসিয়েছে এবং সড়কগুলোতে টহল শুরু করেছে। শহরের উপকণ্ঠেও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অঙ্গীকার করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে মিল রেখে বিকালে বায়তুল মুকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে পাল্টা সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শাপলা চত্বরে সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।
আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন, তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি।দলের অসুস্থ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিও দাবি করেছে তারা। বিরোধী দল তাদের সমাবেশকে শান্তিপূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
শুক্রবার তাদের মহাসমাবেশের একদিন আগে থেকে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী, নয়া পল্টনে সমবেত হতে থাকে। শনিবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সমাবেশে বাধা দিতে পারে এই আশঙ্কায় তারা আগেভাগে এসেছেন বলে জানান অনেকে। আর, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে জামায়াত।
নির্বাচনের আগে বিএনপির বিরুদ্ধে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ তা প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছে। এই কর্মসূচিকে শান্তি সমাবেশ বলে অভিহিত করেছে আওয়ামী লীগ।
যেকোনো সহিংসতা ঠেকাতে, শনিবারের রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য শুক্রবার রাজধানীতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোনো পক্ষকেই পুলিশ অনুমতি দেয়নি।
ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। আর, বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, মৎস্য ভবনে গণতন্ত্র মঞ্চ এবং বিজয়নগর এলাকায় ১২ দলীয় জোট সমাবেশের প্রস্তিতি নিয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ অনুমতি চাইলেও, তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে পুলিশ।
ডিএমপি সদর দপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) খন্দকার মাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “জামায়াতে ইসলামী অনুমতি চেয়ে আবেদন জমা দিলেও, শাপলা চত্বরের মতো জায়গায় কোনো সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।”
এদিকে, শনিবারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের টহলের পাশাপাশি বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট।
নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীরা
শনিবারের মহাসমাবেশের অনুমতি না পেলেও, শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকাল থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে শুরু করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসা বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী, নয়াপল্টনের আশপাশের মসজিদে জুমার নামাজে যোগ দেন। এমনকি, তাদের অনেকেই নয়াপল্টনে রাজপথে নামাজ আদায় করেন।
জুমার নামাজ শেষে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তারা দলের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় বসে পড়েন।
শনিবার দুপুর ২টায় বিএনপির মহাসমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে, গত ১৮ অক্টোবর সরকার পতনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে, ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। আর, গত ২১ অক্টোবর দলটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালন করতে চায় বলে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে চিঠি দেয়।
বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের মঞ্চ
এদিকে, বিএনপির মহাসমাবেশের জবাব দিতে এবং শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ সফল করতে, মঞ্চ তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ২টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ মঞ্চ তৈরির কাজে হাত দেয় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগ জানায়, “শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে যোগ দিয়ে মিথ্যাচার-গুজব, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে জনগণ।”
এদিকে, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, “আমরা অত্যন্ত দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আওয়ামী লীগের প্যাড ও সই জালিয়াতি করে একটি চিহ্নিত মহল, শনিবারের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিতের ভুয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।”
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক অপশক্তি বিএনপি তাদের চিরাচরিত মিথ্যাচার,অপপ্রচার, গুজব ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, গণতন্ত্রবিরোধী এই অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”