বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, সরকার আরেকটি একতরফা নির্বাচনের জন্য দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপির সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে রেখে এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে একতরফা নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো ভোটারবিহীন আরেকটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকার দেশকে সম্পূর্ণ সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশের জনগণ সরকারকে আর একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে এবং এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে”।
তিনি বলেন, তাদের দল এখন নির্বাচন নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়, কারণ তাদের মূল লক্ষ্য আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন নিশ্চিত করা।
তিনি আরও বলেন, সরকারের অধীনস্থ কয়েকটি দল ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয় না।
তিনি বলেন, “এভাবে নির্বাচন করার কোনো মানে হয় না। সারা বিশ্ব বলছে, আপনাদের শেষ দুটি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। সুতরাং, এই ধরনের নির্বাচনের কী লাভ? সুতরাং জোর করে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে তারা কী লাভ করবে?”
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে আগামী দিনগুলোতে তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।
সফররত যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ আইআরআই ও এনডিআইয়ের প্রাক-নির্বাচন মূল্যায়ন মিশনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল।
তিনি বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের দলকে বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
বিএনপি রাজনৈতিক সংলাপের পথ বন্ধ করে দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে মন্তব্য করেছেন, তা প্রত্যাখ্যান করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা বাজে কথা ও বড় মিথ্যে”।
তিনি বলেন, তাদের দল দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, সরকার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে তারা সংলাপে বসতে পারে। তিনি বলেন, সরকারকে প্রথমে ঘোষণা করতে হবে যে তারা এটি (নিরপেক্ষ সরকারের দাবি) মেনে নেবে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে বুধবার সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে এ্যানির বাড়ির দরজা ভেঙে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডাকাতের মতো আচরণ করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “যেভাবে তাকে (অ্যানি) গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা প্রমাণ করে যে, বিএনপির সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এই সরকার একতরফা নির্বাচনের পথে রয়েছে”।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার বিএনপির অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতাদের কারারুদ্ধ করা ও গ্রেপ্তার করা স্বৈরাচারী শাসকদের পুরোনো অভ্যাস”।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে—তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের আশা প্রকাশ
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি সব সময় বলে যে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না, কিন্তু পরে তারা অংশ নেয়।
তিনি বলেন, “আমি আশা করি, এবারও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে”।
সোমবার (৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের চেয়ে জনগণের অংশগ্রহণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি ও তার মিত্ররা যদি নির্বাচন বর্জনও করে, জনগণের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন বাংলাদেশে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে চায় কি না জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমরা চাই তারা নির্বাচনে আসুক, সে জন্যই আমরা তাদের বারবার আহ্বান জানাচ্ছি। তারা যদি এত জনপ্রিয়ই হয়, নির্বাচনে আসুক”।