আগামী নির্বাচন সহিংসতামুক্ত হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলকে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সহিংসতামুক্ত হবে। আমার মনে হয় না, কোনো সমস্যা হবে। আমরা তাদের বলেছি যে ৮০ ও ৯০–এর দশকে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা নিঃসন্দেহে তাদের বলেছি যে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সফররত প্রাক্-নির্বাচন দলের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে, তা পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছেন। এবার যিনি প্রতিনিধিদলের নেতা তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এসেছিলেন।
তিনি জানান, নির্বাচনের সময় যদি কোনো প্রার্থী নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন কিংবা কোনো দল বাধাগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ করেন, তখন কী হবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রশ্ন তারা জিজ্ঞাসা করেছেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা বলে দিয়েছি, আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড দেখেছি, এমন হত্যাকাণ্ড আর দেখিনি। শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। তিনি আবার এখানে আসার পর আবার তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা একটি সহিংসা ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়েছি। এখানে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। তিনি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিও চান, নির্বাচনের কমিশনের মাধ্যমে একটি সুন্দর নির্বাচন হোক। স্বচ্ছ ব্যালটবাক্স, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তিনিই প্রবর্তন করেছেন। কাজেই এখন দুর্নীতির কোনো কারণ নেই।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, তারা জিজ্ঞাসা করেছেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের নিরাপত্তা আমরা দিতে পারব কি না? বিরোধী দল নির্বাচনে এলে সঠিকভাবে তারা প্রচার চালাতে পারবে কি না। আমরা বলে দিয়েছি, নির্বাচনের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা সর্বময় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে সেই এলাকার নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এমনকি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতার কথাও আমরা বলেছি।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা বলেছি, সহিংসতামুক্ত নির্বাচন পরিচালনায় পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার দায়িত্ব পালন করে। অনেকগুলো নির্বাচন পরিচালনার অভিজ্ঞতা তাদের আছে।
এই নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ৫ হাজার ৩০০টি নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকে। এখানকার পুলিশ সুপ্রশিক্ষিত, কীভাবে নির্বাচনকে পরিচালনা করতে হয়, তা তারা জানে। আগের মতো সহিংসতা আমাদের দেশে হয় না। এখন আমরা সহিংসতামুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা
উল্লেখ্য, ২২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে আগ্রহীদের সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত অঙ্গীকারের অংশ এটি”।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপের মধ্যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, “বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র; যাতে এটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়”।