সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এই উৎসব ঘিরে, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মণ্ডম-মন্দিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরি শেষ; মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজ। দুই-একদিনের মধ্যে রংতুলিতে প্রতিমা সাজাবেন শিল্পীরা।
দুর্গোৎসবের জন্য বাগেরহাট জেলার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। এবছর বাগেরহাটের সদর উপজেলা, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলার ৬৫২টি মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আয়োজন চলছে।
আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব। সনাতন শাস্ত্র মতে, এবার দেবী দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গ থেকে মর্তলোকে আসবেন। এরপর মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও দশমীতে (২৪ অক্টোবর) বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে ঘোড়ায় চড়েই তিনি ফিরে যাবেন স্বর্গলোকে।
পূজা উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা কর্মযজ্ঞ চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে। অধিকাংশ মণ্ডপে প্রতিমায় কাদামাটির কাজ শেষ করেছেন শিল্পীরা। এখন রঙ লাগানোর পর্ব। দর্শনার্থীদের নজর কারতে, সাজসজ্জায় নানা উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে। থিম ভিত্তি করে বিভিন্ন মন্দিরে চলছে সাজসজ্জা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাঠিগোমতি গ্রামের প্রতিমাশিল্পী (ভাস্কর) মিলন পাল জানান, বংশপরম্পরায় তারা প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন। তার দাদা ও বাবার পর তিনি প্রতিমা তৈরি করেন। এই উপার্জন থেকেই তার সংসার চলে।
বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নিলয় কুমার ভদ্র বলেন, “শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আছে। তবে, আশা করি, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা পাবো।”
নিলয় কুমার ভদ্র জানান, “এ বছর পূজামণ্ডপগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।” দর্শনার্থীদের পূজা মণ্ডপে আসার সময় বড় ব্যাগ বহন না করার পরামর্শ দেন তিনি।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান জানান, “পূজা মণ্ডপগুলোতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২১৬টি পূজামণ্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে; সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। এছাড়া, প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা এবং নিজস্ব স্বেসেচ্ছাসেবক বাহিনী রাখার জন্য বলা হয়েছে।”
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, “শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জেলায় এবং প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও দায়িত্ব পালন করবেন।” দশমীর দিন রাত ৮টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে হয়েছে বলে জানান তিনি।