বাংলাদেশ সরকার ২৩০০০ কোটি ডলারের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু-সহনশীলতা অর্জন করতে চায় এবং কার্যকর অভিযোজন কৌশলগুলো অবলম্বন করে একটি জলবায়ু-সহনশীল জাতি গঠনের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। এই পরিকল্পনা, একটি শক্তিশালী সমাজ ও বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করে এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রেরণা দেয়।
সরকারের একটি নথি থেকে জানা যায়, এই পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে আটটি স্বতন্ত্র ভাগে ভিবক্ত। এর মধ্যে রয়ছে; জলসম্পদ, বিপর্যয়, সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, কৃষি, মৎস্য, জলজ উদ্ভিদ ও পশুসম্পদ, শহুরে এলাকা, বাস্তুতন্ত্র ও জলাভূমি এবং জীববৈচিত্র্য, নীতি ও প্রতিষ্ঠান, সক্ষমতা উন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবন।
এনএপি বাস্তবায়নের জন্য মোট ২৩০০০ কোটি ডলার অর্থায়নের প্রয়োজন। এর ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ ২০৪০ সালের মধ্যে গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নথি অনুসারে, এনএপি বাস্তবায়নের জন্য ২৩ টি বিস্তৃত কৌশল এবং ২৮টি ফলাফলের মাধ্যমে ছয়টি লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, জলবায়ু-জনিত বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষার বিভিন্ন দিক।
এই পরিকল্পনা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বাস্তুতন্ত্র ভিত্তিক অভিযোজন, উন্নত শাসন ব্যবস্থা, উন্নত জলবায়ু অর্থায়ন ও রূপান্তরমূলক ক্ষমতা-নির্মাণ এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে জলবায়ু-সহনশীল কৃষি, অবকাঠামো এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক খাতগুলোর বিকাশ করবে।
এনএপি উন্নত অভিযোজন পথ এবং খাতভিত্তিক অভিযোজন প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে ১১৩টি প্রক্রিয়া প্রণয়নের জন্য জলবায়ুর চাপে রয়েছে এমন ১১টি ক্ষেত্র বিবেচনা করেছে। এই প্রক্রিয়াগুলো বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ (বিডিপি-২১০০) এর ৫২টি জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এনএপি প্রক্রিয়া, নারী ও বিভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যুব, জাতিগত সম্প্রদায় এবং অন্যান্য সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে। নথি অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের বিশ্ব জলবায়ু ঝুঁকি সূচকে এর অবস্থান সপ্তম স্থানে।
এই বিষয় মাথায় রেখে, কয়েক দশক ধরে, জলবায়ু-সহনশীল টেকসই উন্নয়ন সক্ষম করার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ অভিযোজিত ক্ষমতা ও সহনশীলতা তৈরিতে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে। সরকার ২০২২ সালের অক্টোবরে এনএপি গ্রহণ করেছে; যা ২০৫০ সাল পর্যন্ত ২৭ বছরে কার্যকর করা হবে।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের আগস্টে একটি হালনাগাদ এনডিসি জমা দেয়। এখন বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি, ২০০৯) হালনাগাদ করা হচ্ছে। যাতে এটি এনএপি ও হালনাগাদ করা এনডিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।