অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নৃশংসতার স্মরণ: আমাদের নিজের ঘরে ফিরতে সাহায্য করুন


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নৃশংসতার স্মরণ: আমাদের নিজের ঘরে ফিরতে সাহায্য করুন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নৃশংসতার স্মরণ: আমাদের নিজের ঘরে ফিরতে সাহায্য করুন

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার কুতুপালং ক্যাম্পে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সমাবেশ করেছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক। এই বিশাল সমাবেশে সাঈদা নামে এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, “আমরা আমাদের ভাষায় দাবি জানিয়ে আসছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্ণপাত করছে না। আমরা ইংরেজিতে আমাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। তবুও তারা মনোযোগ দিচ্ছে না। আমরা হতাশ। আমরা শুধু ভুক্তভোগী নই, আমরা বেঁচে আছি এবং তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বলছি।”

তিনি বলেন, “আমি ২৫ আগস্টের দিনটি কখনোই ভুলতে পারবো না এবং গত ৬ বছর আমরা মাতৃভূমি মিয়ানমারে যেতে পারিনি। ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়েছে, ন্যায়বিচার অস্বীকার করা হয়েছে। আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।”

সমাবেশে সম্মিলিত দাবি ওঠে, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে; আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা, মিয়ানমারের অন্যান্য ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর মতো পূর্ণ অধিকারসহ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার।

দশ বছর বয়সী বনি আমিন; ৬ বছর আগে মিয়ানমার থেকে দেশটির সামরিক জান্তার আক্রমণের সময় পরিবারের ৮ সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশে আসে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই শিশু বলেছে, “আমার মনে আছে কীভাবে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো। আমি বাড়ি যেতে চাই।”

শুক্রবার সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, তারা মিয়ানমার সরকারের কাছে আবেদন করতে চান; যেন তারা আগের মতোই মিয়ানমারে ফিরে যেতে ও সেখানে বসবাস করতে এবং নাগরিক হিসেবে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারেন। তারা বলেন, “মিয়ানমারের অর্থনীতি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।”

রোহিঙ্গারা তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রোহিঙ্গা যুবক মুসা বলেন, “আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে সাহায্য করুন, ওটা আমাদের দেশ। আমরা বাংলাদেশে থাকতে চাই না।”

তিনি বলেন, “আসুন, এই দিনটিকে কেবল আমাদের অভিন্ন ট্র্যাজেডি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য নয়, বরং পদক্ষেপ নেয়ার দিন হিসেবে পালন করি। আসুন আমরা বেদনার ঊর্ধ্বে গিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচারের দাবি জানাই।”

মুসা আরো বলেন, “আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এমন একটি পথ সৃষ্টি করবে যে বিশ্বে এই ধরনের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি হবে না। শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে, সব সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।”

পরিবারের সদস্যদের হারানো নূর জাহান বলেন, তারা ন্যায়বিচার চান এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চান। তিনি বলেন, “ আমরা মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার চাই।”

শুক্রবার অন্তত ২৫ হাজার রোহিঙ্গা কয়েক ডজন সমাবেশে যোগ দেন। সবচেয়ে বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় কুতুপালং ক্যাম্পে। বৃষ্টিপাতের মধ্যেই অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা সেই সমাবেশে যোগ দেন। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের দাবি জানান।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান শুরু করে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গুরুতর অপরাধ। পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।

XS
SM
MD
LG