ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা'। অর্থাৎ ‘ঘুষ খাবো না, কাউকে খেতেও দেব না'।
অবশ্য দেশের বিরোধীরা প্রথম থেকেই দাবি করে আসছেন, মোদীর এই স্লোগান মস্ত বড় মিথ্যাচার। বিগত সাড়ে নয় বছর তিনি আসলে দলের নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেননি। সিবিআই, ইডির মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরোধীদের পিছু নেওয়া।
প্রধানমন্ত্রীর অধীনে থাকা সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন (সিভিসি) সম্প্রতি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী-অফিসারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রচুর। সিভিসি তাদের সদ্য প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০২২-এ কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী অফিসারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের মোট অভিযোগ জমা পড়ে এক লাখ ১৫ হাজার ২০৩টি। এর মধ্যে ৮৫ হাজার ৪৩৭টি অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়েছে। ২৯ হাজার ৭৬৬টি অভিযোগের তদন্ত এখনও চলছে।
সিভিসি জানিয়েছে, অভিযোগ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে বলা আছে সব মন্ত্রককেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই রিপোর্ট সময়মতো পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য, মন্ত্রকের প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ফের তদন্ত করে সিভিসি।
উল্লেখ্য, সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন হল কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী-অফিসারদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগের তদন্তকারী সংস্থা। ভারতে রাজ্য সরকারগুলির অধীনেও পৃথক ভিজিলেন্স কমিশন আছে।
সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন জানিয়েছে, গত বছর জমা পড়া মোট অভিযোগের ৪৬ হাজার ৬৪৩টি দায়ের হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে কর্মরত কর্মী-অফিসারদের বিরুদ্ধে। ওই মন্ত্রকের দায়িত্বে বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা তথা দলের প্রাক্তন সভাপতি অমিত শাহ। সংবাদ সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকা বিভিন্ন আধা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও এই তালিকায় ধরা আছে। সরকারি সূত্রের আরও খবর, কম-বেশি সব মন্ত্রকেই বেশিরভাগ অভিযোগ কাজের বিনিময়ে ঘুষ দাবি করা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পর আছে রেল। তৃতীয় স্থানে ব্যাঙ্ক। রেলের কর্মী-অফিসারদের বিরুদ্ধে জমা হওয়া অভিযোগ ১০ হাজার ৫৮০টি। ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জমা পড়ে আট হাজার ১২৯টি অভিযোগ।
দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তুলনায় রেল কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনেকটাই কম। যদিও কর্মী সংখ্যায় ভারতীয় রেল পৃথিবীর বড় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম। অন্যদিকে, আধা সামারিক বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি জনসাধারণের কোনও যোগ নেই। এই বাহিনী থানার দায়িত্বে থাকে না। দৈনন্দিন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণও তাদের কাজের মধ্যে পড়ে না। তবে দিল্লি পুলিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। রাজধানীর পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও তদন্ত করে সিভিসি।