ভারতে সরকারিভাবে এই নিয়ম দু'দশক আগে মানে ২০০২ সালে চালু হয়েছে যে চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশনে ওষুধের 'জেনেরিক' নাম লিখবেন। তারপর বারে বারে বলা সত্ত্বেও প্রেসক্রিপশনে ওষুধের ‘জেনেরিক' নাম লেখাতে অধিকাংশ চিকিৎসককেই বাধ্য করা যায়নি। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বড় কোম্পানির বেশি দামের ওষুধ (ব্র্যান্ড নেম) প্রেসক্রিপশনে লিখছেন।
সুপ্রিম কোর্টে এই মর্মে অভিযোগ করে মামলা হয়েছে। শুনানিতে শীর্ষ আদালতও একমত যে এই রীতিই এখনও চলছে। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন তুলেছেন এই মর্মে যে কীভাবে এই অনিয়ম চলতে পারছে। শীর্ষ আদালত জানতে চেয়েছে, যে চিকিৎসকেরা নিয়ম ভাঙছেন তাদের কী সরকার সাজা দিচ্ছে কি না। সব রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করেছেন প্রধান বিচারপতি।
প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক ও ব্র্যান্ড নেম লেখা নিয়ে বিতর্ক ভারতে বহু পুরনো। জেনেরিক নাম লেখা হলে রোগী ও পরিজনেরা তাদের আর্থিক সামর্থ মতো ওষুধ কিনতে পারেন। কিন্তু ব্র্যান্ড নেম লেখার অর্থ রোগীকে বিশেষ কোম্পানির ওষুধ কিনতে বাধ্য করা। তারফলে অনেক রোগীই ওষুধের বিপুল খরচ সামাল না দিতে পেরে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। অভিযোগ, নানা সুবিধার বিনিময়ে চিকিৎসকদের একাংশ ওষুধের ব্র্যান্ড নেম লিখে থাকেন।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হওয়া মামলায় আইনজীবী কিষানচাঁদ জৈন অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্যান্ড নেম ও জেনেরিক নেম-এর মধ্যে ওষুধের দামে ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ ফারাক হয়। চিকিৎসকেরা জেনেরিক নাম লিখলে রোগীদের বড় অংশের সুবিধা হয়।
প্রসঙ্গত, দ্য ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল (প্রফেশন্যাল কনডাক্ট, এটিকেট অ্যান্ড এথিক্স) রেগুলেশনস, ২০০২ অনুযায়ী চিকিৎসকেরা ওষুধের জেনেরিক নেম লিখতে বাধ্য। সতর্ক করার পরও তারা ব্র্যান্ড নেম লিখলে সরকার সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে রেজিস্ট্রেশন সাময়িক সময়ের জন্য বাতিল করে রোগী দেখা বন্ধ করে দিতে পারে।
কিন্তু চিকিৎসা মহলের বক্তব্য, দেশে এই ব্যাপারে নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেই। কোনও সরকারই এই ব্যাপারে কড়াকড়ির পথে হাঁটেনি। ওষুধ উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিগুলির চাপ তো আছেই, সরকারেরও স্বার্থ আছে। বড় কোম্পানির দামি ওষুধ বিক্রি হলে জিএসটি বাবদ সরকারের বেশি অর্থ আদায় হয়।