অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস: দেশ জুড়ে কেন্দ্র সরকারের প্রস্তুতি তুঙ্গে


ভারতের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস: দেশ জুড়ে কেন্দ্র সরকারের প্রস্তুতি তুঙ্গে।
ভারতের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস: দেশ জুড়ে কেন্দ্র সরকারের প্রস্তুতি তুঙ্গে।

স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় আমন্ত্রিত ১৮০০ অতিথি, জাতীয় পতাকা নিয়ে সেলফি প্রতিযোগিতা কেন্দ্রের

১৫ অগাস্ট ২০২৩ ভারতে পালিত হতে চলেছে ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস। সেই উপলক্ষে সাজো সাজো রব গোটা দেশে । কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘আজাদির অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন হচ্ছে দেশজুড়ে। স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণীয় করে রাখতে, বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। ১৫ অগাস্ট দিল্লির লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই অনুষ্ঠানে ১৮০০ জন বিশেষ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এই উৎসবে মেতে ওঠার আহ্বান জানানো হয়েছে দেশের প্রত্যেক মানুষকে। কেন্দ্র সরকারের তরফে উৎসবে অংশ নিতে বলা হয়েছে দেশের নাগরিকদের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, "জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রত্যেকে নিজের একটি করে ছবি তুলুন। আর সেই ছবি তেরঙ্গা সাইটে আপলোড করুন।"

কেন্দ্র সরকারের তরফে রাজধানীতে বসানো হচ্ছে সেলফি পয়েন্ট। দিল্লির ১২টি জায়গায় থাকবে এই সেলফি পয়েন্ট। কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরা থাকবে এই পয়েন্টে। সেইসব পয়েন্টে গিয়ে এক বা একাধিক ছবি তুলে দেশবাসীকে সরকারি পোর্টালে আপলোড করতে বলেছে কেন্দ্র সরকার।

কেন্দ্র সরকারের তরফে শুরু করা হচ্ছে অনলাইন সেলফি প্রতিযোগিতা। আগামী ১৫ অগাস্ট থেকে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে এই অনলাইন সেলফি প্রতিযোগিতা। স্বাধীনতা উৎসবের অংশ হিসেবেই এই প্রতিযোগিতা করা হচ্ছে। দিল্লির রাস্তায় ১২টি জায়গায় থাকবে সেলফি পয়েন্ট। কেউ যদি সেখানে যান, তবে সেই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নিজের এক বা একাধিক সেলফি তুলতে পারেন। আর পাঠিয়ে দিতে পারেন ‘MyGov Portal’-এ। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া নাগরিকদের সেলফি থেকে বাছাই করে সেরা ১২ জনের নাম ঘোষণা করা হবে। প্রত্যেক বিজয়ীকে ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে সরকারের তরফে।

এ বছর স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষিকা, নার্স, কৃষক, মৎস্যজীবী, সন্ন্যাসীরা। যারা সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রজেক্ট তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন, তাদের প্রত্যেককে অনুষ্ঠানে হাজির করা হবে। খাদি বিভাগের কর্মীরা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সব মিলিয়ে ১৮০০ জন বিশেষ অতিথি উপস্থিত থাকবেন স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার অনুষ্ঠানে।

ভারতীয় সেনার তরফেও বিশেষ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যখন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন সে সময় আকাশে চক্কর দেবে সেনার দুই হেলিকপ্টার। সেখান থেকে পুষ্পবৃষ্টি হবে।

আগামী ১৩ থেকে ১৫ অগাস্ট দেশজুড়ে বাড়ি বাড়ি জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি ট্যুইট করে লেখেন, "আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করব এই হর ঘর তেরঙ্গা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুন। আগামী ১৩ থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে এই হর ঘর তেরঙ্গা মুভমেন্ট।"

স্বাধীনতা দিবসের উপলক্ষে আঁটোসাটো নিরাপত্তা বলয়, ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন রাজধানী দিল্লিতে

কেন্দ্রের তরফে প্রত্যেক বারেই স্বাধীনতা দিবসের সময়ে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক বেশি আঁটোসাটো করা জয়। কারণ নিরাপত্তা সংস্থার সূত্রে খবর থাকে, প্রতি বছরই এই সময়ে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে। ফলে, নির্বিঘ্নে স্বাধীনতা দিবস পালন করতে কোনও রকম ত্রুটি রাখা হয় না কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে।

চলতি বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ইতিমধ্যেই স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি পর্ব তুঙ্গে রাজধানী দিল্লিতে। সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে গোটা শহরে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে রাজধানী শহরকে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সুমন নাল্লা বলেন, "স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পেয়ে গর্বিত দিল্লি পুলিশ। মোট ১০ হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন গোটা দিল্লি শহর থেকে শুরু করে লালকেল্লা এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার রাস্তায়।"

জানা গেছে এর পাশাপাশি হামলা এড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে চলেছে দিল্লি পুলিশ। এআই দ্বারা পরিচালিত মুখের ছবি তোলার ব্যবস্থা থাকছে। পাশাপাশি, রবিবার রাত থেকেই ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে একাধিক এলাকায়।

দেশে ফোনের কলার টিউনে বাজছে 'হর ঘর তিরঙ্গা’ টিউন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রের উদ্যোগ

ভারতে কাউকে ফোন করলেই এখন শুনতে পাওয়া যাচ্ছে ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কলার টিউন । কেন্দ্র সরকার, স্বাধীনতার বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার আহ্বান আগেই জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, "জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রত্যেকে নিজের একটি করে ছবি তুলুন। আর সেই ছবি তেরঙ্গা সাইটে আপলোড করুন।"

কেন্দ্র সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কলার টিউনটি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পাল্টানো হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে ১৩-১৫ অগাস্ট পর্যন্ত ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে।

গত বছর, ২০২২-এ ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ কর্মসূচি পালন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তারই অঙ্গ হিসেবে স্বাধীনতা দিবসের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে চরম প্রস্তুতির ছবিও নজরে এসেছিল। সেই কর্মসূচি আরও জোরদার করতেই কলার টিউন পরিবর্তনের পথে হেঁটেছে কেন্দ্র, মত পর্যবেক্ষকদের।

প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ সোশ্যাল মিডিয়ার ডিপি বদলানোর, কটাক্ষ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর

রবিবার ১৩ অগাস্ট সকালে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার ডিপি বা ডিসপ্লে পিকচার বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার মুখের পরিবর্তে জাতীয় পতাকার ছবি লাগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দেশবাসীর প্রতি আবেদন বলেছেন, “হর ঘর তিরঙ্গা নামে যে অভিযান শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে একাত্মতা জানাতে আপনারাও সোশ্যাল মিডিয়ার ডিপি বদলে দিন। এতে দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধন আরও মজবুত হবে।”

স্বাধীনতা দিবসের আগে ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ নামে একটি উদ্যোগ শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। শুক্রবার ১১ অগাস্ট সেই অভিযানের সূচনা করেছেন উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান নিয়ে লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “এটা একটা সাধু উদ্যোগ। প্রতি বছরই কোটি কোটি মানুষ স্বাধীনতা দিবসের দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। স্কুলে স্কুলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাড়ায়, ক্লাবে, আবাসনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে আবাসিকরা যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে ডিপি বদলানোর ব্যাপারটা জুড়লেন। কিন্তু তাতে কি রান্নার গ্যাসের দাম কমবে?”

অধীর আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিপি চেঞ্জ করলে দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধন আরও মজবুত হবে। তার মানে যখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না তখন কি দেশের সঙ্গে দেশবাসীর আবেগের বন্ধন মজবুত ছিল না?” তার কথায়, "আমি বলব না যে কেউ প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনবেন না। কারও ইচ্ছা হলে ডিপি বদলাতেই পারেন। তা ভাল কথা। কিন্তু এও বুঝতে হবে যে এটা হল শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা। দেশে যখন কর্মসংস্থানের অভাব, গরিবের হাতে কাজ নেই, মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে, তখন প্রধানমন্ত্রী নিয়ম করে একটা খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। আসল সমস্যার সমাধান উনি করছেন না।”

XS
SM
MD
LG