অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা বিতর্কের দ্বিতীয় দিন: রাহুল গান্ধী বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রীকে, দিলেন 'ফ্লাইং কিস', উঠল সংসদ টিভি বিতর্ক


ভারতে সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা বিতর্কের দ্বিতীয় দিন
ভারতে সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা বিতর্কের দ্বিতীয় দিন

প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মণিপুরে ভারত মাতাকে খুনের অভিযোগ রাহুল গান্ধীর

ভারতের সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা বিতর্কের দ্বিতীয় দিন ছিল, বুধবার ৯ অগাস্ট। এদিন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্কে শাসক জোটকে তীব্র আক্রমণে করেছেন রাহুল গান্ধী। ভাষণের শুরুতেই মণিপুর নিয়ে সরব হন কংগ্রেস নেতা। নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে রাহুল বলেন, "আপনারা মণিপুরে ভারত মাতাকে খুন করেছেন।"

এরপর অবশ্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে রাহুল বলেন, "আপনি মণিপুরকে দেশের অংশ মনে করেন না। আপনি মণিপুরকে দু’টুকরো করে দিয়েছেন।"

রাহুলের ‘ভারত মাতাকে খুন’ মন্তব্য নিয়ে লোকসভা সরগরম হয়ে ওঠে। বিজেপি দাবি তোলে রাহুলকে এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। পাল্টা সরব হন কংগ্রেস সহ বিরোধী জোট ইন্ডিযয়া-র নেতারা। রাহুল প্রশ্ন তোলেন কেন প্রধানমন্ত্রী মোদী মণিপুর গেলেন না।


আগে ঠিক ছিল রাহুল বৃহস্পতিবার বলবেন। পরিকল্পনা বদলে রাহুল গান্ধী বুধবার লোকসভায় অনাস্থা বিতর্ক শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা বিতর্কের জবাব দেবেন বৃহস্পতিবার।

সংসদ ছাড়ার সময় ‘ফ্লাইং কিস’ রাহুল গান্ধীর: প্রবল আক্রমণ স্মৃতি ইরানির, নালিশ গেল স্পিকারের কাছে

সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার পরে, বুধবার প্রথম লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য রাখেন রাহুল গান্ধী। এদিন তাকে ঘিরে এক নতুন বিতর্ক দেখা দেয়। এদিন বক্তৃতা শেষ করে সংসদ ছেড়ে বেরোনোর সময়ে দেখা যায়, বিজেপি সাংসদদের উদ্দেশে একটি ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়ে দেন তিনি।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। রাহুলের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে, স্মৃতি ইরানি ‘সংসদে চুমু’র অভিযোগ তুলে দাবি করেন, দেশের সংসদে এই ধরণের আচরণ আগে কখনও দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, এমন আচরণ রাহুল গান্ধী ‘নারীবিদ্বেষী’ মনোভাবের পরিচয় বলেও আক্রমণ করেন তিনি।

তবে, স্মৃতি ইরানির এই অভিযোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৮ সালে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ‘চোখ মারা'-র অভিযোগ উঠেছিল সংসদে বসেই। সেটিও এক অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্ক চলছিল। সে সময়েই আচমকা তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জড়িয়ে ধরেছিলেন এবং তারপর সতীর্থ সাংসদদের দিকে মুচকি হেসে চোখ টিপেছিলেন। তাঁর সেই ‘চোখ মারা’র ছবি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায় সেবার।

এবার অবশ্য ফ্লাইং কিস-এর বিষয়টি সংসদের টিভিতে সম্প্রচারিত হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। যদিও স্মৃতির অভিযোগেই শেষ হয়নি এই ‘চুমু পর্ব’। এর পরে বিজেপির মহিলা সাংসদেরা সদলবলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার ঘরে যান এবং তাঁর কাছে আলাদা করে অভিযোগ করেন রাহুলের বিরুদ্ধে।

সংসদ সূত্রে জানা গেছে, বক্তৃতা শেষ করে বেরোনোর সময়ে রাহুলের কিছু কাগজপত্র হাত থেকে পড়ে যায়। তাই দেখে হাসাহাসি করেন সরকার পক্ষের লোকজন। তখনই নাকি রাহুল কাগজগুলো কুড়িয়ে ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে হেসে একটা ফ্লাইং কিস ছুড়ে দেন। সেই ট্রেজারি বেঞ্চেই ছিলেন বিজেপির কয়েক জন মহিলা সাংসদ।

সংসদ ছাড়ার সময় ‘ফ্লাইং কিস’ রাহুল গান্ধীর
সংসদ ছাড়ার সময় ‘ফ্লাইং কিস’ রাহুল গান্ধীর

এদিকে এই ব্যাপার যখন ঘটছে, সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি তার বক্তৃতা ততক্ষণে শুরু করে দিয়েছেন। তখনই তিনি তীব্র আক্রমণ শানান এই নিয়ে। এর পরে বিজেপির ওই মহিলা সাংসদরা দল বেঁধে স্পিকারের ঘরে গিয়ে দাবি করেন, কংগ্রেস নারীশক্তির কথা বললেও আসলে তাদের মনে মহিলাদের জন্য কোনও সম্মান নেই। দলের সাংসদের আচরণেই তার প্রমাণ মেলে।

রাহুলের আজকের চুমু বিতর্কে কংগ্রেস আগে থেকেই প্রস্তুতি রেখেছে। এদিন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের একটি পুরনো ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ফ্লাইং কিস ছুড়ছেন তিনিও।

এদিন স্মৃতি ইরানি মণিপুরের ইস্যুতে রাহুলের বক্তব্যের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানিয়েছেন। তার আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে স্মৃতি বলেন, ‘"-ভারত মাতার হত্যার কথা বলে সংসদে বসে বসে টেবিল বাজিয়েছেন কংগ্রেসীরা। গোটা দেশ এটা দেখেছে। আপনারা ইন্ডিয়া নন, কারণ ইন্ডিয়া দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। ইন্ডিয়া রাজবংশে নয়, যোগ্যতায় বিশ্বাস করে। আজকের দিনে আপনাদের মতো লোকদের জন্য সেটাই হলা উচিত যে ব্রিটিশদের বলা হয়েছিল – ভারত ছাড়ো। দুর্নীতি ভারত ছাড়ো, রাজবংশ ভারত ছাড়ো।"

পাশাপাশি কাশ্মীর ইস্যু এবং ৩৭০ ধারার বিষয়টিও তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। তিনি বলেন, "রাহুল গান্ধী একটি যাত্রায় হেঁটেছেন বলে আজ সংসদে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই যাত্রায় রাহুল আশ্বাস দিয়েছেন, ৩৭০ ধারা পুনঃস্থাপন করবেন। আমি তাকে বলতে চাই, দেশে ৩৭০ ধারা পুনঃস্থাপন করা হবে না এবং যারা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের হুমকি দিত, তাদেরও রেহাই দেওয়া হবে না। কাশ্মীরে আর ৩৭০ ধারা ফিরবে না।"

রাহুল গান্ধীর ৩৭ মিনিটের বক্তৃতায় সংসদ টিভি তাকে কেন ১৪ মিনিট দেখাল প্রশ্ন কংগ্রেসের

সুপ্রিম কোর্ট স্বস্তি দেওয়ার পর সাংসদ পদ ফেরত পেয়ে রাহুল গান্ধী লোকসভায় বুধবার তার প্রথম বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের অভিযোগ রাহুল ৩৭ মিনিট বক্তৃতা দিলেও সংসদ টিভির ক্যামেরা তাকে দেখিয়েছে মাত্র ১৪ মিনিট। অর্থাৎ স্ক্রিন টাইম ছিল ৪০ শতাংশেরও কম।

বুধবার দুপুরে এই তথ্য তুলে ধরে জয়রাম রমেশ সহ কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা প্রশ্ন তুললেন, "নরেন্দ্র মোদীর কেন এত ভয়? রাহুলকে কেন ভয় পাচ্ছেন মোদী?"

সংসদ টিভির উপর সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেই। রাজ্যসভা ও লোকসভার সচিবালয় তার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। তবে সাধারণ ধারণা এই যে, যারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকেন, তারাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদ টিভিও সরকারের আরেকটি প্রচার যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।

এদিন লোকসভায় ভারতীয় সময় দুপুর ১২ টা ৯ মিনিট থেকে ১২ টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত বক্তৃতা দিয়েছেন রাহুল। তার বক্তৃতার মধ্যে বারবার ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বাধা এসেছে। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় লোকসভার স্পিকার থাকার সময়েই নিয়ম করে দিয়েছিলেন যে গণ্ডগোলের সময়ে ক্যামেরার মুখ থাকবে স্পিকারের চেয়ারের দিকে। লোকসভায় চাপানউতোর, চিৎকার, স্লোগান দেখানো হবে না দেশের মানুষকে।

কংগ্রেসের অভিযোগের পর লোকসভার সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, গন্ডগোলের কারণেই মাঝে মাঝে ক্যামেরার মুখ স্পিকারের চেয়ারের দিকে ঘোরাতে হয়। এ ছাড়া আর কোনও কারণ ছিল না। কংগ্রেস অবশ্য সেই যুক্তি মানতে নারাজ। জয়রামদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী যখন জবাবি বক্তৃতা দেবেন, তখন মিলিয়ে দেখতে পারেন স্ক্রিন টাইম কতটা ছিল।

XS
SM
MD
LG