অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

হরিয়াণার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ: চলছে চাপান-উতোর, পরিস্থিতি থমথমে


সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে হরিয়ানার একাধিক জেলা।
সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে হরিয়ানার একাধিক জেলা।

গত সোমবার ৩১ জুলাই থেকে আচমকা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে হরিয়ানার একাধিক জেলা। নুহ, গুরুগ্রামের মতো বড় বড় শহরগুলিতে এখনও থমথমে পরিস্থিতি। আগুন জ্বলছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। এরমধ্যেই গত শুক্রবার ৪ অগাস্ট হঠাৎ খবর ছড়ায়, নুহের নলহার মন্দিরে আশ্রয় নেওয়া বেশ কয়েকজন মহিলাকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। তবে শনিবার ৫ অগাস্টের মধ্যেই সেই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে এই হিংসার ঘটনার সঙ্গে যে পাকিস্তানি যোগের খবর রটেছিল, সেটাও মিথ্যা বলে পরিষ্কার জানিয়েছেন হরিয়ানার ডিজিপি পিকে আগরওয়াল।

হরিয়ানা পুলিশের দাবি, এই ঘটনাটি একেবারেই গুজব এবং মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। নলহার মন্দিরে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। অতিরিক্ত এডিজিপি মমতা সিং বলেন, "এমন কিচ্ছু ঘটেনি মন্দিরের ভিতরে। কোনও মহিলা যৌন হেনস্থার শিকার হননি। আমি নিজে সেখানে ছিলাম বলে জোর দিয়ে এ কথা বলতে পারছি। কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃত গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। এতে শহরগুলির পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়ে উঠবে।" যারা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এরপর তিনি আরও বলেন, জেলায় জেলায় হিংসা ছড়ানোর ঘটনায় ইতিমধ্যে ২১৬ জনের কাছাকাছি ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। এরমধ্যে ৮৩ জনকে প্রতিরোধমূলক গ্রেফতার করা হয়েছে, অর্থাৎ বিনা বিচারে আটক রয়েছেন তারা। মূলত হিংসা ছড়ানো থেকে বিরত রাখতেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে হরিয়ানা পুলিশ। এই হিংসার ঘটনা আগেই সাম্প্রদায়িক হানাহানির রূপ নিয়েছে। তারমধ্যেই মন্দিরের ভিতর মহিলাদের যৌন হেনস্থার খবর ছড়ানোয় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগোতে পারত। তার আগেই সাংবাদিকদের সামনে গোটা বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন অতিরিক্ত এডিজিপি, ফলে এড়ানো গেছে আরও বড় হিংসা।

হরিয়ানার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ সুপরিকল্পিত, দাবি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
নুহতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষকে পরিকল্পিত হামলা বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সেরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ। তিনি জানিয়েছেন, পাহাড়ের উপর থেকে গুলি চালানো হয়েছিল। এমনকী, বাড়িগুলির ছাদে পাথর জড়ো করে রাখা হয়েছিল। পূর্বপরিকল্পিত না হলে এমনটা হওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি তার।

ভিজ শুক্রবার ৪ অগাস্ট জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ২০২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। বিভিন্ন থানা মিলিয়ে মোট ১০ টি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, "এটা একটা বড় পরিকল্পনা। প্রত্যেকের হাতে একটা করে লাঠি ছিল। সেগুলো কি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল? কেউ নিশ্চয়ই সেগুলো জোগাড় করে দিয়েছিল। গুলিও চালানো হয়েছিল। এসব অস্ত্র এল কোথা থেকে? আমি গভীরে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করব।"

এর আগে মঙ্গলবার ১ অগাস্ট অনিল ভিজ দাবি করেছিলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই হিংসার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল, এবং এতে কোনও ‘মাস্টারমাইন্ড’ রয়েছে। শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন নুহ-এর পুলিশ সুপার নরেন্দ্র সিং বরজানিয়া। তিনি জানিয়েছেন, "এখনও পর্যন্ত তদন্তে যা দেখা গেছে, তাতে এই ঘটনায় কোনও মূল চক্রী রয়েছে বলে মনে হয় না। বরং বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল। তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে।"

এই ঘটনার সমাধান হিসেবে অভিযুক্তদের সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। উত্তরে অনিল ভিজ জানান, যেখানে দরকার সেখানে বুলডোজার ব্যবহার করা হবে। ‘বুলডোজার চিকিৎসার একটা অংশ’ দাবি তার।

নুহতে হিংসার ঘটনার নাম জড়িয়েছিল পুলিশের খাতায় নাম থাকা দাগী অপরাধী মনু মানেসারের। গোরক্ষীবাহিনীর সদস্য মনু রাজস্থান পুলিশের ওয়ান্টেড তালিকাভুক্ত আসামি। তাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে হরিয়ানার পুলিশ সহযোগিতা করছে না বলে দাবি করেছিলেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন অনিল। "দেশজুড়েই কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য এবং কথা বলেই থাকেন। ওরা আসুক, এসে মনু মানেসারকে গ্রেফতার করুক। আমরা তো কাউকে বাধা দিইনি। হরিয়ানা পুলিশ অন্য রাজ্যে গিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করে, সবাই সহযোগিতা করে। আমরাও করব," জানিয়েছেন তিনি।

XS
SM
MD
LG