বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানে টানা চার দিনের বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার পানিতে শহরের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কের বাইতুল ইজ্জত এলাকায় সড়ক নিমজ্জিত হওয়ায়, বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এছাড়া, শহরের জ্ঞানরত্ন বৌদ্ধ বিহার এলাকায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায়, রাঙ্গামাটির সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানছি সড়কে, রবিবার (৬ আগস্ট) থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জিপ-কার-মাইক্রেবাস শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন।
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শহরের বালাঘাটা, ফজর আলী পাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, পুলিশ লাইন এলাকা, ছাইগ্যা মহাজন পাড়া, হর্টিকালচার কেন্দ্রে এলাকা, লালমিয়া চর এলাকা, বাস স্টেশন, হাফেজঘোনা, আর্মিপাড়া, কাশেম পাড়া, স্টেডিয়াম ও কেচিং পাড়া এলাকার জনগণ দুই দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের সরে যেতে প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় দুর্গতদের সহায়তায় ১৯৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। ২০ টন খাদ্যশস্য এবং নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৪৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমেন শর্মা জানান, “এ পর্যন্ত পাহাড় ধসে ৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে, বান্দরবান শহরের বীর বাহাদুর নগর ও স্টেডিয়াম এলাকায় পাহাড় ধসে আহত দুইজনকে রবিবার রাতে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
তিনি আরো জানান, নাইক্ষংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নে খাল পার হতে গিয়ে রবিবার বিকালে মেমপই ম্রো (৩০) নামে এক ব্যক্তি স্রোতে ভেসে গেছে। নিখোঁজ এ ব্যক্তির এখনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বন্যার বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দেয়ার জন্য একটি ওয়েব পেইজ খুলেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসে ৭১৮টি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে ওয়েব পেইজ-এ জানানো হয়।
এদিকে জলবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসন এবং স্থানীয় উদ্যোগে পর্যাপ্ত পরিমাণ নৌযান নামানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাহাড় ধস
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মো. হানিফ আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থল থেকে একই পরিবারের ৪ সদসস্যকে জীবিত উদ্ধার করেছেন।
সোমবার (৭ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহী কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িটিতে থাকতেন মো. হানিফ নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের এক কর্মচারী। এ সময় হানিফ ও তার স্ত্রীসহ দুই ছেলে-মেয়ে বাড়ির দেয়ালের নিচে চাপা পড়েন। পরে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে ভোরের দিকে প্রায় ৩০০ ফুট দূর থেকে একটি বড় গাছসহ পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এতে কাঁচাপাকা বাড়িটির দুই পাশের দেয়াল ভেঙে যায়। হানিফ বলেন, “ভোর রাতে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়ে মাটি ধসে পড়ে। আমরা সবাই চাপা পড়ি। রাত থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছিলো। ভোর রাতের দিকে হঠাৎ দেয়াল এসে আমাদের গায়ের ওপর পড়ে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল আজিম সিকদার বলেন, “ভোর রাতে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঘরের দেয়াল ভেঙে একজনের মাথা ফেটে গেছে।” তিনি আরো বলেন, “তাদেরকে আগেই মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছিলো। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়েছি।”
সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।আর, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।