অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

চলতি বছর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে, উদ্বেগের কারণ হবে ক্যাপাসিটি চার্জ


চলতি বছর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে, উদ্বেগের কারণ হবে ক্যাপাসিটি চার্জ
চলতি বছর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে, উদ্বেগের কারণ হবে ক্যাপাসিটি চার্জ

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর, এই বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ অব্যবহৃত বিদ্যুৎ থাকবে; উদ্বেগের কারণ হবে ক্যাপাসিটি চার্জ। বাড়তি উৎপাদনের জন্য, চলতি অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ৩৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। এ তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রিড ও অফ-গ্রিড বিদ্যুৎসহ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ২৮ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট। চলতি বছরের মধ্যে এটি ৩১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াট হবে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি অব্যবহৃত থাকবে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বর্তমানে গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া, ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার ২৪৮ মেগাওয়াট।

অফ-গ্রিড বিদ্যুৎ, বিশেষ করে, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো বড় পরিবর্তন নেই।এ ধরনের বিদ্যুৎ প্রধানত শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে যুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছরের একই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াট। অর্থাৎ, এক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ২ হাজার ৪২৯ মেগাওয়াট।

বর্তমানে আরো ৩ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাইপলাইনে রয়েছে; যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩১ হাজার ২৭৩ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, “সব মিলিয়ে এই বছর গ্রিডে ৫ হাজার ৫৪৩ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। যদিও, এই সময়ের মধ্যে চাহিদা বাড়বে আরো ১ হাজার মেগাওয়াট।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা জানান, নতুন সব বিদ্যুৎ আসছে বেসরকারি খাত থেকে; সরকারি প্ল্যান্ট থেকে নয়। আর, এই সময়ের মধ্যে ভাড়ায় চালিত প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, অনেক গ্রাহক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বিশাল বৃদ্ধিতে খুশি হতে পারে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশ অব্যবহৃত রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ বা পরিচালন ব্যয় পরিশোধের ক্ষেত্রে এটি কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে।

বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গত অর্থবছর (২০২২-২৩) আমাদের ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে ২৬ হাজার কোটি টাকা দিতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে। আর, ২০২১-২২ অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিলো ২১ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি।”

ক্যাপাসিটি পেমেন্টের সঙ্গে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র এক বছর আগে ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসছে। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের ৯০ শতাংশের বেশি অর্থ প্রদান করা হবে বৈদেশিক মুদ্রায়।

ক্যাপাসিটি চার্জ হলো বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) অধীনে এক ধরনের জামানতযুক্ত পেমেন্ট। বেসরকারি উৎপাদনকারীর কাছ থেকে বিপিডিবি বিদ্যুৎ নিলেও সেই অর্থ দিতে হয়, না নিলেও দিতে হয়। বিপিডিবি’র আরেক কর্মকর্তা বলেন, “দুই বছর আগের তুলনায় চলতি অর্থবছরে আমাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাড়বে।”

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নতুন কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এরই মধ্যে গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বা সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে; আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৬২০ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামের বাশখালীর এস আলম গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাটে রিলায়েন্স পাওয়ার এলএনজি-ভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে ৭১৮ মেগাওয়াট, এলএনজি-ভিত্তিক জিই-সামিট মেঘনাঘাট-২ পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৫৯০ মেগাওয়াট এবং মেঘনাঘাটে এলএনজি-ভিত্তিক ইউনিক গ্রুপের পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

সরকারি পরিসংখ্যান থেকে আরো জানা গেছে, বিপিডিবি তহবিলের ঘাটতি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। বেসরকারি খাতে বকেয়া বিল রয়েছে এই বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ২৫ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। বিপিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, “বেসরকারি খাতের মে ও জুলাইয়ের বিল যোগ করা হলে তা ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।”

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বিপিডিবির বোঝা কমাতে ‘বিদ্যুৎ নেই পেমেন্ট নেই’ পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিত। আর, সরকারকে আমদানি-ভিত্তিক এলএনজি-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে, স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”

XS
SM
MD
LG