বিরোধী দলের এক দফা আন্দোলন ঠেকাতে সরকার পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্মীপুরে কৃষক দল নেতা সজীব হোসেনকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতারা।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ঢাকার নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোক মিছিল বের করার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কথা বলেন তারা। সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ঢাকা উত্তর মহানগর শাখার আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ।
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে কৃষক দল নেতাকে হত্যার জন্য সরকারকে দায়ী করা হবে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সজীবের রক্ত বৃথা যাবে না। “সজীব হোসেনকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। দিবালোকে এ ঘটনা ঘটে। আমাদের আন্দোলন ঠেকাতে সরকার এটা করেছে”।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। তাই নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার আবশ্যক”।
বরকতুল্লাহ বুলু অভিযোগ করেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরকার এ পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৯ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার সরকার আমাদের এক দফা আন্দোলন বন্ধ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাদের টার্গেট করছে। তাদের দল এক দফা আন্দোলন শুরু করায় সরকার বেকায়দায় পড়েছে। সেই আন্দোলনে যে সজীব প্রাণ দিয়েছেন তার রক্ত বৃথা যাবে না”।
বরকতুল্লাহ বুলু আরও বলেন, “জোরপূর্বক গুম, হামলা-মামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যাবে না। আমরা এই আন্দোলনকে সফল করব। দেশের সব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বর্তমান শাসন ক্ষমতাচ্যুত করতে ঐক্যবদ্ধ”।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
আমানউল্লাহ আমান অভিযোগ করেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন, হত্যা, হামলা ও গুম করে সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়।
তিনি বলেন, “কোনো ষড়যন্ত্র এবং দমনমূলক কৌশল এবার কাজ করবে না। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। তারা তাদের এক দফা দাবি আদায় করে ছাড়বে”।
আমানউল্লাহ আমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই লক্ষ্মীপুরে সজীবকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে বলেন, এই শাসনের পতন না হওয়া পর্যন্ত তাদের দল রাজপথ থেকে পিছপা হবে না। “আমাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করব”।
সমাবেশের পর সজীব হোসেন হত্যার প্রতিবাদে বিকেল ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোক র্যালি বের করে বিএনপি।
বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী কালো ব্যাজ বেঁধে এবং সরকারবিরোধী স্লোগান নিয়ে সমাবেশ ও শোক র্যালিতে যোগ দেন। র্যালিটি কাকরাইল ও নয়াপল্টন প্রদক্ষিণ শেষে ফকিরাপুল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে বলা হয়, সরকারের পদত্যাগসহ তাদের এক দফা দাবি আদায়ে শুক্রবার (২১ জুলাই) জুমার নামাজের পর সারা দেশের মসজিদে মুসল্লিদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করবেন বিএনপি নেতা–কর্মীরা।