বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) আর রাজনৈতিক নিপীড়ন সহ্য করবে না এবং আগামী দিনে উপযুক্ত জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করবে। আমরা ১৫ বছর ধরে আপনাদের (সরকারের) অত্যাচার সহ্য করেছি। এটা আর সহ্য করব না”।
বুধবার (১৯ জুলাই) রাজধানী ঢাকার উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ীর দিকে বিএনপির পদযাত্রা শুরুর আগে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিল কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা করেছে এবং অনেককে আহত করেছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, “গতকাল সারা দেশে আপনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের ওপর যে নিপীড়ন চালিয়েছেন, আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেব ইনশাআল্লাহ”।
তিনি বলেন, তাদের দল গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। “আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং আমাদের ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে”।
মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা মিছিল করার সময় মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করলে আমরা কীভাবে আপনাকে রেহাই দেব? এটা ঘটবে না। আপনাদের বাঁচার দিন শেষ”।
মির্জা আব্বাস বলেন, তাদের দলের নেতা-কর্মীরা কীভাবে জেলে যেতে হয়, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয় এবং প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা করে কীভাবে মিছিল করতে হয় তা জানে। তিনি বলেন, “আমরা আর আপনাদের অত্যাচার সহ্য করব না। আমরা নৃশংসতার জবাব দেব”।
তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ‘শান্তি মিছিলের’ নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) লক্ষ্মীপুরে আমাদের দলের একজনকে হত্যা করা হয়েছে এবং আপনারা শান্তি মিছিলের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। আপনারা কেন ঝামেলা তৈরি করতে চান?”
সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে পাল্টা কর্মসূচি না দিতে তিনি ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য সংবিধান থেকে এক বিন্দুও নড়বে না- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা আব্বাস বলেন, তারাও পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের আগের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন চান।
মির্জা আব্বাস পরে সকাল ১১টা ৫ মিনিটে উত্তরার আবদুল্লাহপুরে পলওয়েল মার্কেটের সামনে পদযাত্রা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রখর রোদে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী। বুধবার দেশের অন্য মহানগর ও জেলা শহরেও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার গাবতলী থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত মিছিল করে বিএনপি। সব শহর ও জেলা শহরেও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
টানা দ্বিতীয় দিনের মতো নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট ও ছাত্র অধিকার পরিষদও কর্মসূচি পালন করে।
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত ১২ জুলাই ‘এক দফা’ আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক দফা দাবি আদায়ে প্রথম কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিনি ১৮ ও ১৯ জুলাই দুই দিনের দেশব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিএনপি ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে সরে আসেনি—তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে সরে আসেনি। তিনি বলেন, বিএনপি যে সাংঘর্ষিক রাজনীতি করে; জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে সরে আসেনি, সেটি তারা মঙ্গলবার প্রমাণ করেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, আজ বুধবার (১৯ জুলাই) আবার তারা পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। একই সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন ও শান্তি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন, মঙ্গলবার বিএনপি সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করা হয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য দেশে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করা। যেটি গতকাল আবার স্পষ্ট হয়েছে।
হাছান মাহমুদ আরও বলেন, তারা (বিএনপি) দেশের ৯টি জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। মিরপুর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতার মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে, জাতীয় পতাকা পুড়িয়েছে। খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করেছে। তারা পৌরভবনেও হামলা চালিয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বগুড়ায় সাতমাথা মোড়ে বিএনপির যাওয়ার কোনো অনুমতি ছিল না, পুলিশ বাধা দিলে ইটপাটকেল ছোঁড়ে। এতে বাধ্য হয়ে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছুঁড়েছে। লক্ষ্মীপুরে সামাদ একাডেমির সামনে আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষকে প্রভোক (উসকানি) করেছে। এভাবে সংঘর্ষ বাধিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এটিই। এভাবে সংঘর্ষ বাধিয়ে দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। আমরা সেটির সুযোগ দেব না।