ভারতের সংসদে দাঁড়িয়ে কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, "এক আকেলা সব পর ভারী'। অর্থাৎ বিরোধীদের মোকাবিলার জন্য তিনি একাই যথেষ্ট। বিরোধী জোটের বৈঠকের দিন মঙ্গলবার ১৮ জুলাই বিজেপি এনডিএ জোটের বৈঠক ডাকল। সেই জোটে ছোট, ক্ষুদ্র, অনামি মিলিয়ে মোট ৩৮টি শরিক দলকে হাজির করা হয়েছিল। রাজনৈতিক মহলে কৌতূহলের বিষয় - সনিয়া-মমতারা যেদিন জোটের বৈঠকে বসলেন, বেছে বেছে সেদিনই কেন এনডিএ-র বৈঠক ডাকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে তার সম্ভাব্য কারণগুলো হল:-
১) লোকসভা ভোটের এখনও ৮ মাস বাকি। তার আগে জাতীয় স্তরে মনঃস্তাত্ত্বিক লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ধারণা তৈরির লড়াইয়ে বিজেপিকে টেক্কা দিতে ২৬টি রাজনৈতিক দল একজোট হয়েছে। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলে গোটা দেশে এমন একটা ধারণা তৈরি করা যে, ১৩০ কোটি দেশের উন্নতি নয়, অবনতি করছে মোদী সরকার। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে মোদী ও তাঁর নেতৃত্বে এনডিএ জোট যেমন সমষ্টিগতভাবে দেশে কংগ্রেস বিরোধিতার পরিবেশ তৈরি করতে সফল হয়েছিল। সনিয়া-মমতারা চাইছেন, তেমনই বিজেপি বিরোধিতার পরিবেশ তৈরি করতে।
সেই ন্যারেটিভ তথা প্রচারের একটা কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরির জন্য মঙ্গলবারই এনডিএ-র বৈঠক ডেকেছেন জেপি নাড্ডারা। যাতে দেখানো যায় যে বিরোধীদের সঙ্গে ২৬টি দল রয়েছে তো নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ৩৮টি দল রয়েছে। এই ৩৮টি দলের মধ্যে বেশ কিছু দলের কোনও সাংসদই নেই। কিন্তু বিজেপি কৌশলে ৩৮ সংখ্যা দিয়েই ২৬কে ঢাকতে চাইছে।
২) প্রত্যাশিত ছিল যে এদিন সর্বভারতীয় ও আঞ্চলিক সমস্ত সংবাদমাধ্যম জুড়ে থাকবে বিরোধী বৈঠকের ছবি। কিন্তু বিজেপি কৌশলে তা করতে দিল না বিরোধীদের। বরং স্ক্রিন স্প্লিট করে দেওয়ার কৌশল নিল। অর্থাৎ সংবাদমাধ্যমে শুধু বিরোধী শিবিরের ছবি ছেয়ে থাকল না, শাসক জোটের ছবিটাও থাকল।
৩) ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠনের পর দেশজুড়ে যেন অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটিয়েছিল বিজেপি। যে কোনও রাজনৈতিক দলই চায় তার প্রভাব ও জমি বাড়াতে। অতীতে লালকৃষ্ণ আডবাণী-অটলবিহারী বাজপেয়ীও চেয়েছিলেন। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এ ব্যাপারে তাঁদের থেকেও আগ্রাসী মোদী-শাহ জুটি। তাঁদের আধিপত্যবাদ এতটাই উগ্র যে এনডিএ-র অনেক পুরনো শরিক তাঁদের ছেড়ে গিয়েছেন। বিজেপির হয়তো আশঙ্কা রয়েছে যে কংগ্রেস সহ ২৬ দলের যে জোট হয়েছে, তা এখানেই থেমে থাকবে না। এ ধরনের জোট সবসময়েই সংক্রামক একটা ব্যাপার। এক জনকে দেখে অন্যজনের আগ্রহ তৈরি হয়। ফলে ছোটখাটো আঞ্চলিক শক্তি যাতে এই বিরোধী জোটের সঙ্গে না জুড়ে যায়, তাই আগেভাগে তাদের এনডিএ-তে সামিল করার চেষ্টা হল।
পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, রাজনীতিতে ধারণাই সব - এই প্রচলিত মত মাথায় রেখে, মঙ্গলবার সেই ধারণা তৈরির লড়াইয়ে বিরোধী শিবিরকে মোকাবিলার চেষ্টা করল মোদী বাহিনী। তবে বিজেপির জন্য আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ থাকল। আডবাণী-বাজপেয়ী যেভাবে শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন, সেই পরম্পরা মোদী জমানায় দেখা যায়নি। ফলে এই ৩৮টি দলকে বিজেপি শেষ পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে রাখতে পারবে কিনা সেটা বড় চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া বিরোধী জোট এখন নিয়ম করে এবং ধারাবাহিক ভাবে দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে সভা করবে। সেই সব বৈঠকের মোকাবিলাও করতে হবে মোদী-শাহকে।