অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আরো বৃষ্টি হতে পারে, বাংলাদেশের দুই জেলায় পানিবন্দী ৩৭ হাজার পরিবার


আরো বৃষ্টি হতে পারে, বাংলাদেশের দুই জেলায় পানিবন্দী ৩৭ হাজার পরিবার
আরো বৃষ্টি হতে পারে, বাংলাদেশের দুই জেলায় পানিবন্দী ৩৭ হাজার পরিবার

বাংলাদেশ ও ভারতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার জলবন্দী মানুষের। উত্তরাঞ্চলীয় নদ-নদীগুলো অস্বাভাবিক আচরণ করছে। কখনো পানি বাড়ছে, কখনো পানি কমছে। তবে বাড়িঘর থেকে পানি সরছে না। লালমনিরহাট জেলায় পানিবন্দী হয়ে আছে ২৫ হাজার পরিবার। কুড়িগ্রামে পানিবন্দী ১২ হাজার পরিবার। সব মিলিয়ে দুই জেলায় এখন ৩৭ হাজার পরিবার জলে আটকা পড়ে আছে। আবহাওয়া অফিস বলছে আরো বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি বাড়লে জলের স্তর বাড়বে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট সকলের।

লালমনিরহাটে বন্যা কবলিত ২৫ হাজার পরিবার

লালমনির হাট জেলার তিস্তার বালুচরে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেছিলো এলাকাবাসী। উজানে জলের চাপ থাকায়, ভারতের গজলডোবার জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে। এর পর থেকে এখন আর সেই চিত্র নেই। থৈ থৈ করছে পানি। তলিয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচ উপজেলার ২৫ হাজার পরিবারের সদস্যরা।
শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। পানিতে ঘরবাড়ি তালিয়ে যাওয়ায়, অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন সড়কে, খোলা আকাশের নিচে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারতের গজলডোবায় আরো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানকার জলকপাট খুলে দেয়ায়, তিস্তা ও ধরলার পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডারের আমিনগঞ্জ, কাকিনা; পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী; সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে চলাচলের সড়ক। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজতলাসহ অনেক ফসলি জমি তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারি ইউনিয়নের দোয়ানি গ্রামের বাসিন্দা আফছার আলী বলেন, “গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। শুক্রবার সকাল নাগাদ ঘরের ভেতর হাঁটু পানি। শনিবারও বাড়িতে পানি রয়েছে।”

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মজিবুল আলম সাহাদাত জানান, তাদের ইউনিয়নের অসংখ্যা পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছেন।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ভারত থেকে আসা ঢলের পানির তোড়ে দহগ্রামে যাওয়ার সড়ক ভেঙে প্রায় হাজারখানেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন।

সদর উপজেলার কালমাটি এলাকার বাসিন্দা খয়বর আলী বলেন,“তিস্তার পানি বেশ কয়েকদিন ধরে কখনো বড়াড়ছে, কখনো কমছে। গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুনেছি ব্যারাজ পয়েন্ট পানি কমেছে। তবে আমাদের এলাকায় এখনো পানি ঢুকছে।”

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি. আর সরোয়ার বলেন, “পানিবন্দী মানুষের জন্য শুকনো খাবার ও ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে অনেক পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।”মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী চৌধুরী বলেন, “শনিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় ৫০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ হয়েছে।”

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, “কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ছেড়ে দেয়ায় তিস্তা ও ধরলার পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।”

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ্ জানান জেলার পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের বানভাসি মানুষের সার্বিক খোঁজখবর রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামে ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দী

এদিকে, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত জেলার সব কটি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কিছুটা কমলেও এখনও বিপদ সীমা সীমার উপরে রয়েছে দুধকুমার নদ ও ধরলা নদীর পানি। জেলার ৯ টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

তিস্তা, ধরলা,দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।এসব এলাকার বানভাসি মানুষেরা আসবাবপত্র ও গবাদিপশু পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানগুলোতে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে ভুগছেন তারা।

আরো বৃষ্টি হতে পারে, বাংলাদেশের দুই জেলায় পানিবন্দী ৩৭ হাজার পরিবার
আরো বৃষ্টি হতে পারে, বাংলাদেশের দুই জেলায় পানিবন্দী ৩৭ হাজার পরিবার

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, জেলার ধরলা নদীর পানি কমে, সেতু পয়েন্টে বিপদ সীমার ২১ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমার নদের নুন খাওয়া পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়ন কদমতলা গ্রামের হোসেন আলী বলেন, “গত দু’দিন ধরে পানি বেড়েই চলছে। পানি বাড়ার কারণে এলাকার অনেক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ধানের বীজতলা ও পটলের খেত এখন পানির নিচে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ছাড়া বের হওয়ার কোনো উপায় নাই।”

কুড়িগ্রাম সদরের চর জগমন গ্রামের ছালেহা বেগম বলেন, “কিছুদিন আগে পানি উঠার সঙ্গে সঙ্গে নেমে গেছে। এবার পানি বাড়ার ধরন আলাদা। ঘরের অর্ধেক পানিতে ডুবে গেছে। গত দু’দিন ধরে ঘরের জিনিসপত্র ও হাঁস-মুরগি নিয়ে তাবু টাঙিয়ে ব্রিজে আছি। কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয় না।”

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই পানি বৃদ্ধির অবস্থা তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে। তারপর পানি নেমে যাবে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, “কুড়িগ্রামে বন্যায় ১২হাজার পরিবার পানিবন্দী এবং নদী ভাঙনের শিকার ১৫০০ পরিবার। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য সাড়ে ৮ লাখ টাকা, ২৭৫ মেট্রিক চাল এবং ৩০০ শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।”

আরো বৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অফিস

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার (১৫ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর তার নিয়মিত বুলেটিনে জানিয়েছে যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।

মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে সক্রিয়। এছাড়া, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

XS
SM
MD
LG