ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর চাঁদের দক্ষিণ মেরু অভিযানের এই জার্নিটা মোটেও সহজ কাজ নয়, ইসরো যদি সফল হয় মহাকাশ গবেষণার এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে - এমনটাই মত ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের। দ্বিতীয় চন্দ্রযাত্রা পুরোপুরি সফল হয়নি। অরবিটার চাঁদের কক্ষে পৌঁছলেও ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে চার বছর আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ইসরো-র ঐতিহাসিক চন্দ্রযাত্রা ব্যাহতই হয়। এবারে আবারও নতুন চ্যালেঞ্জ। আগামী ২৩ অগস্ট চাঁদের দক্ষিণ পিঠেই নামবে চন্দ্রযান-৩।
চাঁদের আঁধার পিঠে কি বরফ আছে?
জ্যোতির্বিদরা বলছেন, চন্দ্রাভিলাষ অনেকটা স্বপ্নাভিলাষেরই মতো। যদি সফলতা পাওয়া যায়, তাহলে বিশ্বজয় হবে। লুনার সারফেস বা চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডারের পালকের মতো নেমে আসাটা ‘সফট ল্যান্ডিং’ যথেষ্টই ঝক্কির ব্যাপার। সামান্য ভুল, কয়েক সেকেন্ডের অসতর্কতা, প্রায় হাজার কোটির এই প্রকল্পকে লহমায় তছনছ করে দিতে পারে।
মেরু বলতেই বরফ আর বরফ মানেই জল। কাজেই চাঁদের মেরুতে জলের খোঁজ চন্দ্রযানের একটা বড় লক্ষ্য। চাঁদে বরফ কোথায় রয়েছে, কী পরিমাণে রয়েছে, এই তথ্য যদি রোভার বার করতে পারে তাহলে আগামী দিনে চাঁদে স্টেশন বানানোর স্বপ্নটা মহাকাশবিজ্ঞানীদের ধরাছোঁয়ার মধ্যে এসে যাবে।
রেডিওঅ্যাস্ট্রনমির নতুন দিগন্ত খুলে যাবে
চাঁদে বায়ুমণ্ডল নেই, চৌম্বকক্ষেত্র নেই, কাজেই চাঁদে যদি টেলিস্কোপ বসানো যায় তাহলে মহাকাশ গবেষণার অনেক কঠিন বিষয় সহজ হয়ে যাবে চাঁদে পাকাপাকি ভাবে থাকার কথা যে বিজ্ঞানীরা খুব একটা ভাবছেন, সেটা নয়। চাঁদে মানুষ পাঠানোও খুবই ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। তবে ইসরো-র লক্ষ আগামী দিনে চাঁদে সাময়িক ভাবে বসবাস করে গবেষণা চালানোর। তার জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠ বা লুনার সারফেস-এ যদি রেডিও টেলিস্কোপ বসানো যায়, তাহলে চাঁদের পিঠে সরাসরি আছড়ে পড়া মহাজাগতিক রশ্মি নিয়ে গবেষণা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। এই গবেষণা পৃথিবীর মাটিতে বসে করা খুবই কষ্টসাধ্য।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে ঘিরে আছে আয়নোস্ফিয়ার। যেখানে চৌম্বক তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসছে। কী কারণে মহাকাশ থেকে ধেয়ে আসা খুব কম ফ্রিকোয়েন্সি-র বেতার তরঙ্গ এই আয়নমণ্ডল প্রতিফলিত হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, এটা আমরা পৃথিবীতে বসে দেখতে পাই না। এই বেতার তরঙ্গ নিয়ে গবেষণার কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সৌর বিকিরণ ও সূর্য থেকে ছিটকে আসা পদার্থ বা সোলার পার্টিকেলস চাঁদের উপর কী প্রভাব ফেলে সেটা জানা যাবে সহজেই। চন্দ্রপৃষ্ঠ বা লুনার সারফেস-এর স্তরগুলির উপর এই সৌর বিকিরণের জোরালো প্রভাব রয়েছে। যার গবেষণা বহুদিন ধরেই করছেন বিজ্ঞানীরা। ভারতের চন্দ্রাভিযান এই রহস্যের মোড়ক খুলতে পারে। এক্স রে স্পেকট্রোমিটার বসিয়ে সোলার এক্স রে রেডিয়েশনের তথ্য মিলতে পারে।