অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

২৪ ঘন্টার মধ্যে ভারতের মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে আবার চিতার মৃত্যু, চার মাসে মৃত আটটি আফ্রিকান চিতা, বাড়ছে উদ্বেগ


ভারতের মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে আবার চিতার মৃত্যু
ভারতের মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে আবার চিতার মৃত্যু

ভারতের মধ্য প্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে চিতা বাঘেদের মৃত্যু থামছে না। এবার ২৪ ঘণ্টাও পেরোল না। পুরুষ চিতা তেজসের পরে মৃত্যু হল আরও এক পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতা সুরজের। শুক্রবার ১৪ জুলাই ভোরবেলা কুনো জাতীয় উদ্যানে সুরজের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি।

কুনো জাতীয় উদ্যানের তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন সকালে জঙ্গলে সুরজের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঠিক কী কারণে সুরজের মৃত্যু হল, কোনও অসুখ হয়েছিল কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে।

গত চার মাসের মধ্যে এই নিয়ে কুনো-তে আটটি আফ্রিকান চিতার মৃত্যু হল। গতকালই তেজসের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছিল। একটি স্ত্রী চিতার সঙ্গে জায়গা দখল নিয়ে কিছুদিন ধরেই দফায় দফায় ঝামেলা হচ্ছিল তেজসের। তাদের মধ্যে রীতিমতো মারামারি শুরু হয়। দুই চিতাই পরস্পরকে আঁচড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে। আহত তেজসকে উদ্ধার করে তার চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জখম সেরেও যাচ্ছিল তেজসের কিন্তু ওই মারামারির পরে প্রচণ্ড ট্রমায় ছিল সে। এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে তার শারীরিক অবস্থার ফের অবনতি হতে শুরু করে। কিডনি ও ফুসফুস বিকল হয়ে গিয়েছিল চিতাটির।

দক্ষিণ আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে আনা চিতা ও কুনোতে পরবর্তী সময়ে জন্ম নেওয়া চিতা শাবক মিলিয়ে মোট ২৪টি আফ্রিকান চিতা ছিল জাতীয় উদ্যানে। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬টিতে। ফিন্ডা নামে একটি পুরুষ চিতার আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে নামিবিয়া থেকে আনা ৫ বছরের স্ত্রী চিতা শাসার। ২৪ এপ্রিল মারা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা পুরুষ চিতা উদয়। বন দফতরের পশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন, কুনোর এই চিতার মৃত্যুর কারণ, কার্ডিয়ো পালমোনারি ফেলিওর। পুরুষ চিতার সঙ্গে সঙ্গমের পরে মৃত্যু হয় স্ত্রী চিতা দাক্ষার। মৃত চিতাদের মধ্যে শাবকও আছে। নামিবিয়া থেকে আনা একটি মহিলা চিতা যে ৪টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল, তারই ১টি মারা গেছে। মৃত্যুর কারণ হিসাবে প্রাথমিক ভাবে শারীরিক দুর্বলতাকে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকেরা। পশু চিকিৎসকের দাবি, মারাত্মক ডিহাইড্রেশনে ভুগছিল শাবকটি। তাতেই মৃত্যু হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে চিতাদের নিয়ে এসেছিল ভারত। উদ্দেশ্য ছিল চিতাহীন দেশে নতুন করে এই প্রজাতির সংরক্ষণ করা। প্রায় ৭৪ বছর পরে চিতা দেশে ফিরে আসায় আনন্দও কিছু কম ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের হাতে চিতা ছেড়েছিলেন কুনোর জাতীয় উদ্যানে। কিন্তু ছন্দপতন হয় কিছুদিনেই। চিতারা অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করায় উদ্বেগ বাড়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদরা বলছেন, আফ্রিকান চিতা এইভাবে থাকে না। তাদের বিচরণের জন্য অনেক বড় খোলা জায়গা লাগে। কুনোর জাতীয় উদ্যানে সেই ব্যবস্থা নেই। তাদের খোলামেলা জায়গায় ছাড়তে হবে, হাতের কাছে যাতে শিকার থাকে তা দেখতে হবে। আফ্রিকায় যখন চিতারা ছিল তখন তাদের জন্য বিশাল বড় জায়গা রাখা হয়েছিল। প্রতিদিন দু’বার করে গিয়ে দেখে আসা হত চিতাদের। তারা কী খাচ্ছে, কখন খাচ্ছে, শরীর ঠিক আছে কিনা এইসব খতিয়ে দেখা হত দিনে অন্তত দু’বার। দূর থেকে বনকর্মীরা নজরে রাখতেন চিতাদের, পশুবিদরাও থাকতেন তাঁদের সঙ্গে। কোনও চিতার আচরণে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিকতা দেখলে তাকে এনে চিকিৎসা করা হত। যেহেতু তারা বন্যপ্রাণী তাই সেই মতোই তাদের থাকার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। এ দেশে চিতাদের দেখাশোনা ঠিক মতো হচ্ছে কিনা সে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণীবিদরা।

XS
SM
MD
LG