দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের বিদারের এক স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে পড়ুয়ারা নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। দেশ জুড়ে তখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ চলছে। সংখ্যালঘুরাই ওই আইনের শিকার হবে, এমন অভিযোগ তুলে হাজার হাজার দেশবাসী তখন প্রতিবাদে রাজপথে। স্কুলের নাটকের বিষয় ছিল বিপন্ন প্রান্তিক মানুষের যন্ত্রণা। তাতে চলমান ইস্যু হিসাবে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গও এসেছিল। ছিল প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা, কিছু আপত্তিজনক কথা।
স্কুল পড়ুয়াদের নাটকের দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে মামলা দায়ের করেছিলেন এক ব্যক্তি। পুলিশ মামলা ঠুকেছিল ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২৪-এ ধারায়। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর অবমাননা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
সেই মামলায় পুলিশের বক্তব্য খারিজ করে দিল কর্নাটক হাইকোর্ট। বিচারপতি হেমন্ত চন্দ্রগৌড়া সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়কে দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে স্কুল এবং নাটকে অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রী-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।
বিচারপতির বক্তব্য, "প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করায় রাষ্ট্রের কোনও ক্ষতি হয়নি। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। স্কুলের মধ্যে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। নাটক দেখে কেউ আপত্তি করেনি। নাটক দেখে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। স্রেফ প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা বা আপত্তিজনক মন্তব্যে রাষ্ট্রের অবমাননা করা হয় না।"
প্রসঙ্গত, ফৌজদারি দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজার বিধান রয়েছে। এছাড়া মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন পাওয়াও কঠিন। যদি হাইকোর্ট দেশদ্রোহিতার অভিযোগকে মান্যতা দিত তাহলে বিপাকে পড়ত স্কুল কর্তৃপক্ষ।
তবে কর্নাটকের বিদারের স্কুলটি সম্পর্কে বিচারপতি তাঁর রায়ে কতগুলি সতর্কতামূলক বিষয় উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রীর মতো সাংবিধানিক পদে আসীন কোনও ব্যক্তি সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য না করাই উচিত।" স্কুলের অনুষ্ঠানে রাজনীতি টেনে আনাও ঠিক হয়নি বলে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছেন বিচারপতি। বলেছেন, "পড়ুয়াদের রাজনৈতিক পরিপক্কতা তৈরির আগেই চলমান রাজনীতি নিয়ে নাটক করা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না।"
উল্লেখ করা যায়, কর্নাটকে এখন কংগ্রেস সরকার। স্কুলের এই নাটকের ঘটনার সময় ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। সরকারের জমানা বদল হলেও দেশদ্রোহিতার মামলা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের পরও পুলিশ পিছু হটছে না। তারা উচ্চ আদালতে যাবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইকোর্টের রায়েই সমগোত্রিয় মামলায় সুপ্রিম কোর্টের অভিযোগ খারিজ করে দেওয়ার দৃষ্টান্তের উল্লেখ আছে।