অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সারা ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির আদিবাসীদের নিয়ে প্রশ্ন উঠল বিজেপি-র অন্দরেই


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির প্রবীণ নেতা সুশীল মোদী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপির প্রবীণ নেতা সুশীল মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণার পর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) নিয়ে আগেই আপত্তি উঠেছে বিজেপির শরিক দলগুলি থেকে। এমনকী উত্তর-পূর্ব ভারতের বিজেপির বহু নেতাও মনে করছেন, ইউসিসি দলের বিপদের কারণ হবে দেশের উত্তর-পূর্বে।এবার খোদ সংসদের সংশ্লিষ্ট কমিটির বৈঠকে এই বিধি আদিবাসীদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হলেন বিজেপির এক প্রবীণ সাংসদ।

বিজেপি সূত্রের খবর, বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী, দলের প্রবীণ নেতা সুশীল মোদী সোমবার ৩ জুলাই কমিটি বৈঠকে বলেন, "আদিবাসীদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রথা চালু আছে হাজার হাজার বছর ধরে। সেগুলি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। এটা আসিবাদিদের ঐতিহ্যে আঘাত করা হবে।"

তাৎপর্যপূ্ণ বিষয় হল সুশীল মোদীই সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে বিল আনতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই কারণেই সংসদীয় কমিটির মতামত নিতে সোমবার কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে কংগ্রেসের বিবেক তঙ্খহা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কেন্দ্র করে সরকারি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, "আগের আইন কমিশন এই বিষয়ে অগ্রসর হতে নিষেধ করেছিল। তারপরও কেন সরকার এত তাড়াহুড়ো করছে।"

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পক্ষে জোর সওয়াল করেন। তারপরই সরকারি স্তরে এই বিষয়ে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমান আইন কমিশনও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে নতুন করে নাগরিকদের মতামত নিচ্ছে। কমিটির বৈঠকে আইন কমিশনের তরফে জানানো হয়, এখনও পর্যন্ত ১৩ লাখ নাগরিক মতামত দিয়েছেন।

এদিকে এই বিধি চালু করা নিয়ে বিজেপির বন্ধু দলগুলি আগেই আপত্তি তুলেছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রধান কোনরাড সাংমা জানিয়ে দিয়েছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউসিসি সমর্থনের প্রশ্নই ওঠে না। এই বিধি ভারতের ঐক্য সংহতির পরিপন্থী। তাঁর কথায়, "বৈচিত্রই ভারতের ঐক্য।"

প্রসঙ্গত মেঘালয়ে বিজেপি সাংমার সরকারের শরিক। চার মাস আগের বিধানসভা নির্বাচনে দুই দল পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও সরকার গড়েছে এক সঙ্গে। এমনকী সাংমার শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা।

সাংমা শুধু মেঘালয় নয়, গোটা উত্তর-পূর্বের হয়েই ইউসিসির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন। তিনি বলেন, "উত্তর-পূর্বের মানুষের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করে ইউসিসি হলে এক কথা। সেগুলি গুরুত্ব না পেলে আমরা বিরোধিতা করব।"

নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং মিজোরামেও বিজেপি ইউসিসি নিয়ে বিরোধের মুখে পড়েছে। নাগাল্যান্ডের দ্য ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি এবং নাগা পিপলস ফ্রন্ট আপত্তি তুলেছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে। এই দুই দল অনেক দিন ধরে এনডিএ-র শরিক। আপত্তি আছে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের। সমতলের দলগুলির মধ্যে ঝাড়খণ্ডের আজসুও আপত্তি তুলেছে। প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী ভারতে কিছু আইন সংসদে পাশ হলেই উত্তর-পূর্ব সহ কিছু আদিবাসী প্রধান রাজ্যে তা চালু করতে হলে রাজ্য বিধানসভার অনুমোদন প্রয়োজন হয়। সুশীল মোদী উত্তর-পূর্ব সহ আদিবাসী প্রধান রাজ্যগুলি নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, "আদিবাসীদের সংস্কৃতির উপর আঘাত আসে এমন কিছু করা যায় না।"

সোমবারের বৈঠকে ইউসিসি চালু করা নিয়ে আপত্তি তোলে ডিএমকে সহ দক্ষিণ ভারতের একাধিক দল। পাঞ্জাবে অকালি দল কৃষি আইনের ইস্যুতে দু’ বছর আগে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে গেলেও ফের দুই দলের সমঝোতা বেড়েছে। কিন্তু অকালি দলও জানিয়ে দিয়েছে তারা ইউসিসি সমর্থন করবে না। বিজেপির বন্ধুস্থানীয় দল অন্ধ্রপ্রদেশের জগনমোহন রেড্ডির পার্টি ওয়াইএসআর কংগ্রেসও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিলের বিরোধী। তারাও সমর্থন করবে না বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে, বিজু জনতা দল সমর্থন করবে বলে আগেই অবস্থান স্পষ্ট করেছিল।

কিন্তু বিজেপির সবচেয়ে চিন্তা উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলি নিয়ে। যেমন কেরলে মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও ইউসিসির বিরোধিতায় সরব। ওই রাজ্যে খ্রিস্টানদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি যা ইউসিসির জেরে ধাক্কা খেতে পারে।

উল্লেখ্য, ভারতের উত্তর-পূর্বে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বিপুল। সেই সঙ্গে আদিবাসীদের নানা ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি রয়েছে যেগুলি আইন গ্রাহ্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এমনকী কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বহু বিবাহ সামাজিকভাবে স্বীকৃত। ইউসিসি চালু হলে সেই অধিকার থাকবে না।

আদিবাসীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস। পর্যবেক্ষকদের মতে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু আসলে আরএসএস-র গোড়ার কর্মসূচি। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণা নিয়ে আরএসএস এখনও সরকারিভাবে নিজেদের অভিমত জানায়নি।

XS
SM
MD
LG